১০ পরীক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়ে থানায় মামলা

এসএসসির রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ১০ পরীক্ষার্থীসহ ১৩ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর ছেড়ে দিয়ে আবার পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি করেন।
লালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর এজাহারে চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী মোছা. তাহমিনা খাতুন (১৫), আছিয়া খাতুন (১৫), জান্নাতুল ফেরদৌস (১৫), নুরে জান্নাত (১৫), সুমি খাতুন (১৫), রত্না খাতুন (১৫), নাসরিন জাহান (১৫), জিসান কাজী নিবিড় (১৭), মাসুমা খাতুন (১৫) ও সৈকত সরকারকে (১৭) আসামি করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে র‍্যাবের সদস্যরা দেখেন, লালপুর উপজেলার চাঁদপুর বাজারে জনৈক নুরুল ইসলামের করাতকল-সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে আসামিরা রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উত্তরসহ আদান-প্রদান করছে। র‍্যাবের সদস্যরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করেন এবং সকাল সাড়ে নয়টায় সেখানে অভিযান চালালে আসামিরা তিনটি মুঠোফোন ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে মুঠোফোনগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় ফোনগুলোর মালিক চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী সৈকত সরকার, কাজী নিবিড় ও আছিয়া খাতুন। পরে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে কেন্দ্রসচিব আজমল হোসেন বলেন, কেন্দ্রের উল্লিখিত ১০ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরপরই কেন্দ্রে র‍্যাব, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে বাইরে চলে গেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। জব্দ করা মুঠোফোনে পাওয়া প্রশ্নপত্রসহ উত্তরপত্রের মূল প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। মামলার সব আসামিকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
শিক্ষা কর্মকর্তার এই মামলার এজাহারের বক্তব্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিব্রত বোধ করেছেন লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। সনাক নাটোরের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের সবাইকে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে নাটোর র‍্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে লালপুরের ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের লালপুর থানা-পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে পুলিশ তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনা গতকাল শুক্রবার প্রায় সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। অথচ একই ঘটনা নিয়ে করা মামলায় ভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটি কার্যত সফলতা পাবে না।
মামলার বাদী এস এম আসাদুজ্জামানের কাছে শুক্রবার বিকেলে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা করেছি। পুলিশ তদন্ত করবে। আদালত ডাকলে যা বলার বলব। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাচ্ছি না।’
লালপুর থানার ওসি আবু ওবায়েদ মামলার আসামিদের বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ছেড়ে দেওয়ার পর মামলাটি করা হয়েছে। এজাহারের বক্তব্যে গরমিল থাকলে তা তদন্তে বের হয়ে আসবে।’ তিনটি মুঠোফোন জব্দ করা হলে কীভাবে ১০ পরীক্ষার্থীকে আসামি করা হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাও তদন্তের ব্যাপার।’
গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ‘রসায়নের প্রশ্নও ফাঁস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।