১০ বছর বয়স থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা

১০ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরাও পাবে জাতীয় পরিচয়পত্র। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ পরিচয়পত্র দেওয়ার এই কাজ করবে। আগামী বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এই কাজ শুরু হবে।

শুরুতে বাছাই করা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক কাজ সফল হলে ১০ বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। বয়স ১৮ পূর্ণ হলে তাঁরা ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হবেন।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা ইসির মূল কাজ। সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শামসুল হুদা কমিশন এই কাজের পাশাপাশি ভোটারদের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ারও উদ্যোগ নেয়। ওই সময় থেকে ভোটার নিবন্ধনের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়া এবং একটি ডেটাবেইস তৈরির কাজ শুরু হয়। তখন থেকেই সব বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। এত দিন এটি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এখন ইসি ১৮ বছর থেকে বেশি বয়সী নাগরিকদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে থাকে। ইসির ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদন পেয়েছে। তাতে ১০ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অর্থ সংস্থান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।

আইডিইএ প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদিত হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) করার প্রস্তুতিও তাঁদের আছে। এ জন্য ইসির ১০টি অঞ্চলের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হবে।
মো. সাইদুল ইসলাম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইডিইএ প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদিত হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) করার প্রস্তুতিও তাঁদের আছে। এ জন্য ইসির ১০টি অঞ্চলের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সনদ আছে। এটিকে মূল ধরা হবে। আর এই বয়সী যারা স্কুলে পড়ছে না, তাদের আলাদাভাবে পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাধারণ ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম যেভাবে করা হয়, সেভাবেই তাদের তালিকাভুক্ত করা হবে। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পাইলটিং কাজ শুরু করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আগামী বছরের শুরুর দিকে কাজটি শুরু করার আশা করছেন।

ইসি সূত্র জানায়, শিশুদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স ১০ বছর ধরার কারণ হলো এই বয়সে এসে মানুষের আঙুলের ছাপ পূর্ণতা পায়। এ ছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সীদের পরিচয়পত্রের রং ভিন্ন হবে এবং সেটি হবে কাগজে ছাপা কার্ড। বয়স ১৮ বছর হলে তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। ভোট দেওয়া ছাড়া এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যেসব সুবিধা পান, শিশুরাও প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিতে পারবে।

একনেকে গতকাল আইডিইএ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) অনুমোদনের পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। আর ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের দেওয়া হবে পেপার লেমিনেটিং কার্ড। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি শিশুর জন্মের পরপরই তাকে ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জন্মের পরই একজন নাগরিক তার জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে থাকে। প্রথম আলোনয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, ভারতে জন্মের পরই একটি শিশু আধার কার্ড (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) পাওয়ার যোগ্য হয়ে যায়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যোগটি ইতিবাচক। কিন্তু এটি একটি বিশাল কাজ। ইসির বর্তমান জনবল দিয়ে এখনকার কাজই ভালোভাবে করতে পারছে না। এর সঙ্গে ১৮ বছরের কম বয়সীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ যুক্ত হলে সেটা করা সম্ভব হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।

বাংলাদেশে এখনো সে ব্যবস্থা নেই। জন্মের পর জন্মনিবন্ধন করা হলে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়া যায়। আর জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় ১৮ বছর পূর্ণ হলে। এখন ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেজ্ঞরা। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যথাযথভাবে করা সম্ভব হবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যোগটি ইতিবাচক। কিন্তু এটি একটি বিশাল কাজ। ইসির বর্তমান জনবল দিয়ে এখনকার কাজই ভালোভাবে করতে পারছে না। এর সঙ্গে ১৮ বছরের কম বয়সীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ যুক্ত হলে সেটা করা সম্ভব হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।