১০০ বছর পরও ইনসুলিন সহজলভ্য হয়নি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইনসুলিনের উচ্চমূল্য, অপর্যাপ্ততা, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও একচেটিয়া ব্যবসা জীবনদায়ী এ ওষুধের সর্বজনীন প্রাপ্যতার পথে বাধা হয়ে আছে। আবিষ্কারের ১০০ বছর পরও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বহু মানুষ ইনসুলিন পাচ্ছে না।
‘১০০ বছর পুরোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন–ইনসুলিন প্রাপ্যতা সর্বজনীন করুন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব কথা বলেছে।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে ১২ নভেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আজ রোববার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ইনসুলিন। বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী আছে। ইনসুলিন না পেলে রোগটি তাদের কাছে মৃত্যুর সমান। ইনসুলিন রোগকে ব্যবস্থাপনার পর্যায়ে নিয়ে আসে।

অন্যদিকে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে প্রায় ছয় কোটি মানুষের। তাদের কিডনি ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে ইনসুলিনের বড় ভূমিকা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টাইপ-২ আক্রান্ত প্রতি দুজন রোগীর একজনের ইনসুলিন দরকার হয়, কিন্তু তা তারা পায় না।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে, কিন্তু তার সঙ্গে সংগতি রেখে ইনসুলিনের ব্যবহার বাড়ছে না।

এর একটি বড় কারণ ইনসুলিনের উচ্চমূল্য। তিনটি বহুজাতিক কোম্পানি বিশ্বের ৯০ শতাংশ ইনসুলিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তারা ছোট ছোট কোম্পানিকে ইনসুলিন বিক্রির সুযোগ দিতে চায় না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ১০০ বছর আগে যাঁরা ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন, তাঁরা ওই আবিষ্কার থেকে মুনাফা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তাঁরা মাত্র এক ডলারে মেধাস্বত্ব বিক্রি করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, সংহতির সেই সদিচ্ছা বহু কোটি ডলারের ব্যবসায় ঢাকা পড়ে গেছে এবং ইনসুলিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপর্যাপ্ত আইন ও নীতি, ওষুধের মূল্য নির্ধারণে দুর্বলতা, দুর্বল ক্রয় ও সরবরাহব্যবস্থা, সর্বোপরি সুশাসনের ঘাটতির কারণে মানুষের কাছে ইনসুলিন সহজলভ্য হচ্ছে না।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতার ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ইনসুলিনের পথে বাধা হয়ে আছে।

ইনসুলিন নিয়ে গবেষণা যা হচ্ছে, তা মূলত ধনী বাজারগুলোকে মাথায় রেখে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে অথচ ডায়াবেটিসের ৮০ শতাংশ বোঝা এসব দেশে।
প্রতিবেদনে অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। ইনসুলিনের মূল্য নির্ধারণে আইন তৈরি, স্থানীয় উৎপাদনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রয়োজন মাথায় রেখে গবেষণা ও উদ্ভাবন, রক্তে শর্করা পরিমাপ করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজলভ্য করার কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন

অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন বা রাসায়নিকের নাম ইনসুলিন।রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষে পৌঁছে দেয় ইনসুলিন। পরে সেই গ্লুকোজ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। রক্তে ইনসুলিন কমে গেলে গ্লুকোজ কোষে ঢোকে না, গ্লুকোজ জমে থাকে রক্তে।

এটাই ডায়াবেটিসের পেছনের কারণ।
কোনো কারণে কার্যক্ষমতা হারালে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। ইনসুলিন কমে যাওয়া ও গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া একই সূত্রে গাঁথা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডায়াবেটিস হচ্ছে একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, এই রোগ তখনই দেখা দেয়, যখন অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করলেও শরীর তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে, ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন, যা রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে।

রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের লক্ষণ। ডায়াবেটিস বহুদিন অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে শরীরের বিভিন্ন তন্ত্র বা সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তনালি।