১০০ বছরে বাংলাদেশিদের গড় উচ্চতা বেড়েছে

.
.

বিশ্বে গত ১০০ বছরে দক্ষিণ কোরীয় নারী এবং ইরানি পুরুষদের গড় উচ্চতা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় আমেরিকানদের উচ্চতা তেমন বাড়েনি। যুক্তরাজ্যের ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য দিয়েছেন। এ গবেষণায় বিভিন্ন দেশের মানুষের উচ্চতার সঙ্গে পুষ্টি ও পরিবেশগত সম্পর্কের চিত্রও উঠে এসেছে।
গবেষকেরা ১৯১৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২০০টি দেশ ও ভূখণ্ডের পূর্ণবয়স্ক মানুষের উচ্চতার তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের নারী-পুরুষের গড় উচ্চতা কিছুটা বেড়েছে।
ইলাইফ সাময়িকীতে গতকাল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, একসময় স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে লম্বা পুরুষদের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন সেই জায়গা নিয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া। ডাচ পুরুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ১১ দশমিক ৯ ইঞ্চি।
গবেষণা প্রতিবেদনটির সহলেখক ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের জেমস বেনথাম। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া (যেমন ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের গড় উচ্চতা গত ১০০ বছরে খুব বেশি বাড়েনি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের নারীদের গড় উচ্চতা ১৯১৪ সালে ছিল ৪ ফুট ৭ দশমিক ৭১ ইঞ্চি, ২০১৪ সালে তা ৪ ফুট ১১ দশমিক ৩৭ ইঞ্চিতে পৌঁছায়। আর বাংলাদেশি পুরুষের গড় উচ্চতা ১০০ বছর আগে ছিল ৫ ফুট ২ দশমিক ৪ ইঞ্চি, ২০১৪ সালে তা ৫ ফুট ৪ দশমিক ৫ ইঞ্চিতে পৌঁছায়।
গবেষক দলটির প্রধান ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মাজিদ এজ্জাতি বলেন, এ গবেষণা গত শতকে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির একটা চিত্র তুলে ধরে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের বিকাশের জন্য ভালো পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার গুরুত্বও প্রকাশ পেয়েছে। জীবনের শুরুতে শিশুরা ভালোভাবে লালিত-পালিত হলে, ভালো খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা পেলে তুলনামূলক বেশি লম্বা হয়। তাদের গড় আয়ু বাড়ে এবং পড়াশোনা ও উপার্জনের ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়।
গবেষকদের মতে, লাটভিয়ার নারীরা এখন সবচেয়ে বেশি লম্বা। তাঁদের গড় উচ্চতা ১৯১৪ সালে ছিল ৫ ফুট ১ দশমিক ১ ইঞ্চি। ২০১৪ সালে তা হয়েছে ৫ ফুট ৬ দশমিক ৮৫ ইঞ্চি। এ তালিকায় পরবর্তী দেশগুলো যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস, এস্তোনিয়া, চেক রিপাবলিক।
বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় পুরুষের বাস পূর্ব তিমুরে। সেখানে পুরুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চির একটু বেশি। আর সবচেয়ে খর্বকায় নারীরা থাকেন গুয়াতেমালায়। তাঁদের গড় উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি।
সামগ্রিকভাবে বিশ্বের মানুষের উচ্চতা যখন বাড়ছে, তখন সাব-সাহারান আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মানুষের গড় উচ্চতা গত ৩০-৪০ বছরে কমেছে। এটা বিশ্বের দরিদ্রতম অঞ্চল বলেই সম্ভবত এ পরিস্থিতি। সিয়েরা লিওন, উগান্ডা ও রুয়ান্ডায় গত কয়েক দশকে মানুষের গড় উচ্চতা প্রায় ২ ইঞ্চি কমেছে।
মানুষের উচ্চতার বিচারে শীর্ষ ১০ দেশের সব কটিই ইউরোপের। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষেরা একসময় তৃতীয় শীর্ষ এবং নারীরা চতুর্থ শীর্ষস্থানে থাকলেও এখন দেশটির সেই অবস্থান যথাক্রমে ৩৭তম ও ৪২তম স্থানে নেমে গেছে। ১৯১৪ সালের পর থেকে ১০০ বছরে আমেরিকান পুরুষ ও নারীর গড় উচ্চতা যথাক্রমে প্রায় আড়াই ইঞ্চি ও প্রায় ২ ইঞ্চি বেড়েছে।
জাপানিদের গড় উচ্চতা গত শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত দ্রুত বাড়লেও সেই ধারা অটুট থাকেনি। এখন দেশটির মানুষের উচ্চতা দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মানুষের তুলনায় কম। আবার ইরানি পুরুষদের উচ্চতা বেড়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ ইঞ্চি। এটা পুরুষদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের উচ্চতা বেড়েছে গড়ে প্রায় ৮ ইঞ্চি।