১১ কেজির টিউমার অপসারণ

পেট ফুলে যাওয়া ছাড়া প্রথম দিকে তেমন সমস্যা ছিল না আমিনুল ইসলামের। মাঝেমধ্যে পেটে অল্প ব্যথা হতো। তাই খুব একটা গুরুত্ব দেননি তিনি। তবে ধীরে ধীরে পেট বড় হচ্ছিল। নিজের অজান্তে কিছুদিনের মধ্যে পেট ফুলে বেশ বড় হলে চিকিৎসা নিতে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে বের করা হয়েছে ১১ কেজি ওজনের একটি টিউমার। দেড় ঘণ্টা ধরে এ অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ আছেন।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ জেড এম মোস্তাক হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও আটজন চিকিৎসক। ৫৫ বছর বয়সী এই রোগীর বাড়ি গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায়। দেড় বছর ধরে তাঁর পেটে টিউমারটি ছিল। তিনি পেশায় মুদি দোকানি।
চিকিৎসক দলটির সদস্যরা জানান, মানুষের পেটের ভেতরে পেরিটোনিয়াম নামের একটি পাতলা পর্দা থাকে। পেটের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এই পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। আমিনুলের পেটের টিউমারটির অবস্থান ছিল এই পর্দার পেছনের দিকে। পেটের ওপরের অংশ থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত তা বিস্তৃত ছিল। জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের টিউমার অনেক সময় বেশ বড় আকৃতির হতে দেখা যায়। তবে পেরিটোনিয়াম পর্দার পেছনে এমন আকারের টিউমার সচরাচর হয় না।
চিকিৎসক দলটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করানো হলে রোগীর ঝুঁকির আশঙ্কা কমে যায়। তাই শরীরের কোথাও কোনো চাকা হলে বা পেট ভারী হওয়ার মতো সমস্যা দেখা গেলে চিকিৎসা নিতে দেরি করা উচিত নয়।
নিজের চিকিৎসক জীবনে পেরিটোনিয়ামের পেছন থেকে এত বড় আকারের কোনো টিউমার পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় বের করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম বলে জানালেন অধ্যাপক এ জেড এম মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দীর্ঘদিনের অস্ত্রোপচারের তালিকায় এ ধরনের টিউমার অক্ষত বের করার নজির পাওয়া যায়নি। বলেন, ‘এই অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালিগুলো সুরক্ষিত রেখে পুরো টিউমারটি একবারে বের করে আনা। অস্ত্রোপচারের সময় কিডনি ও খাদ্যনালির নিম্নাংশসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোনো ক্ষতি হয়নি। অস্ত্রোপচারের সময় অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রক্তনালিতে আঘাত লাগলে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের সময় টিউমারটি কোনোভাবে ফেটে গেলেও হতে পারত বড় ধরনের সমস্যা।’
কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? চিকিৎসকেরা জানালেন, টিউমারের মধ্যে যদি ক্যানসারের কোষ থাকে, তাহলে টিউমার ফেটে গেলে সেগুলো পুরো পেটের ভেতর ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও এখনো জানা যায়নি, ঠিক কোন ধরনের টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আমিনুল। আর ঠিক কোন অঙ্গ থেকেই বা উৎপত্তি এ টিউমারের। টিউমারের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে এ বিষয়গুলো জানা যাবে।
অধ্যাপক এ জেড এম মোস্তাক হোসেনের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারের কাজে অংশ নেন ডা. আজমল কাদের চৌধুরী, ডা. নাসিরুল ইসলাম খান, ডা. মাহনাজ তাবাসসুম, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. শুকদেব সাহা, ডা. মো. সালাউদ্দিন, ডা. আকলিমা পারভীন ও ডা. সামিয়া শিহাব উদ্দীন।