১১ বছর তিন মাস বয়সে মুক্তিযোদ্ধা

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ গৃহীত হলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ১১ বছর ৩ মাস বয়স থাকা ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। ১৩ জন আবেদনকারীর বয়স প্রমার্জন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে তাঁদের নাম প্রকাশ এবং সনদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জামুকা। এর আগের প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য বয়স প্রস্তাব করা হয় ১২ বছর ৪ মাস।
জামুকা বলেছে, এই ১৩ জনের নাম ভারতের তালিকা এবং লাল মুক্তিবার্তায় থাকায় তাঁদের বয়স প্রমার্জনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে জন্মসনদ যাচাই করে এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিয়ে আরও ১৬ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে প্রকাশের এবং সনদ দিতে সাব-কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবেদনে তাঁরা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁদের প্রকৃত বয়স বেশি ছিল। যুদ্ধের পর বিদ্যালয়ে বয়স কমিয়ে দেখানো হয়।

জামুকার সূত্র বলেছে, ভারতের তালিকা যাচাই সাপেক্ষে জামালপুরের তোফাজ্জল হোসেনের বয়স ১ বছর ৩ মাস ১৭ দিন এবং সাজেদুল করিমের ১ বছর ৯ মাস ১ দিন প্রমার্জনের সুপারিশ করা হয়েছে। লাল মুক্তিবার্তা যাচাই সাপেক্ষে ঢাকার নাজিম উদ্দিনের
৩ মাস ৪ দিন, ঠাকুরগাঁওয়ের এ কে এম মনজুর রহমানের ৪ মাস ২ দিন, গাজীপুরের আবদুস সোবহানের ১১ মাস ২৫ দিন, যশোরের শহিদুল ইসলামের ২১ দিন ও নুরুল আলম আকন্দের ১ মাস ১২ দিন এবং বরগুনার সালেহ উদ্দিনের ৩ মাস ৪ দিন প্রমার্জনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ভারতের তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকা কুষ্টিয়ার নুরুল ইসলামের বয়স ৩ মাস ৭ দিন ও মো. আবদুল্লাহর ৯ মাস ৯ দিন, ঝালকাঠির নুরুল আলম আকন্দের ২ মাস ১২ দিন, ঝিনাইদহের মতিয়ার রহমানের ২ মাস ৪ দিন এবং জন্ম তারিখ যাচাই সাপেক্ষে ঝিনাইদহের ইসরাইল হোসেনের বয়স ৩ মাস ৯ দিন প্রমার্জনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রথমে জামুকার সিদ্ধান্ত ছিল, ১৯৭১ সালে যাঁদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। গত জুলাইয়ে জামুকার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ যাঁদের বয়স ন্যূনতম ১৩ বছর ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। এরপর তা আরও আট মাস কমিয়ে ১২ বছর ৪ মাস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
জামুকার ২৫তম সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে রাখা ‘ভারতীয় তালিকা’, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁদের নাম লাল মুক্তিবার্তায় (আপত্তি, অভিযুক্ত ব্যতীত) আছে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর করা সনদ রয়েছে, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস্তবতার নিরিখে তাঁদের কারও বয়স যদি প্রত্যাশিত ১৩ বছর না হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁদের বয়স প্রমার্জনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। সাব-কমিটি ২১ দিন থেকে শুরু করে ১ বছর ১১ মাস চার দিন পর্যন্ত বয়স প্রমার্জনের সুপারিশ করে। কারও কারও ক্ষেত্রে জন্মসনদ যাচাই করে বয়স প্রমার্জনের সুপারিশ করা হয়।

১৩ জনের বয়স প্রমার্জনের সুপারিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে রাখা ভারতীয় তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়। কিন্তু লাল মুক্তিবার্তায় যাঁদের নাম রয়েছে বা যাঁদের কেবল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর করা সনদ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়স প্রমার্জনের একটি সীমারেখা থাকা বাঞ্ছনীয় এবং তা এক বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। অন্যথায় এ ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার উদ্ভব হতে পারে। তিনি বলেন, জামুকা ভারতীয় তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সবার এবং লাল মুক্তিবার্তায় নাম রয়েছে অথচ বয়স ১৩ বছরের চেয়ে সর্বাধিক এক বছর কম, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম প্রকাশের ও সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) হারুন অর রশীদ জামুকার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ৪৪ বছর পর এসে এখন কেন ঠিক করতে হবে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আর কে নয়? এগুলো আসলে করা হচ্ছে কারও কারও বিশেষ বিবেচনায়। বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিতেই বয়স প্রমার্জন করা হচ্ছে।