১২ প্রার্থীর অর্ধেকই আওয়ামী লীগের

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী আছেন ছয়জন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী কাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহসভাপতি। বাকি পাঁচজন আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত শুক্রবার এই ছয় প্রার্থীর প্রত্যেকেই প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন ‘তিনিই জনগণের মনোনীত প্রার্থী’। ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছয় প্রার্থীরই পোস্টার টানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী কাজী জহিরুল ইসলামের প্রতীক ‘ঝুড়ি’। তিনি বলেন, ‘এখন নিজেদের মধ্যেই লড়তেছি। আমি বেহাল অবস্থায় আছি। সেন্ট্রাল থেকে বলেছে, ২০ তারিখের মধ্যে সেটেল করে দেবে।’
এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ করা অন্য প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাহারউদ্দিন বাহার, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. আয়নাল হক, পল্লবী থানা তাঁতী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হাসান, ওয়ার্ডের ৯ নম্বর ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মামুন মজুমদার।
দল-সমর্থিত প্রার্থী সম্পর্কে বাহারউদ্দিন বাহার বলেন, ‘জহিরুল যুবলীগ করে, আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরে বাদ দিয়ে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সে যেকোনো মূল্যে মনোনয়ন আনছে। আওয়ামী লীগের কেউ তার পক্ষে নাই।’
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আলী ইমাম আসাদের প্রতীক ‘ব্যাডমিন্টন র্যাকেট’। এলাকায় তাঁর পক্ষে তেমন প্রচার নেই। কিছু জায়গায় তাঁর পক্ষে ভোট চেয়ে পোস্টার টানানো হলেও অন্যান্য প্রার্থীর তুলনায় তা খুবই কম। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৫টি মামলা বিদ্যমান। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ওপর পাশ থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মামলার কারণে আসাদ আত্মগোপনে আছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না।’
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। ১ দশমিক ১০১ বর্গকিলোমিটারের এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৬২ হাজার ৫৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩১ হাজার ৮০৮ জন আর নারী ভোটার ৩০ হাজার ৭৪৪ জন।
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে নির্মাণাধীন সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে চার সড়কের সংযোগস্থল। সংযোগস্থলটি ও সড়কগুলোর কিছু অংশ দুই বছর ধরে দুর্গন্ধময় আবর্জনা ও পানিতে ডুবে আছে। আশপাশের এলাকা থেকে মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরে যাতায়াতের প্রধান এই পথটি এভাবে বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
স্থানীয় দোকানদার আইয়ুব আলী বলেন, ‘মানুষ আইতে পারে না, যাইতে পারে না। দুইবার মোল্লা (স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা) আইসা দেইখা গেছে। কিছু করে নাই।’
লেন ১৭, ১৫ ও প্যারিস রোডের প্রায় ৩০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছরের বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা। প্রথমদিকে জমে থাকা পানি ও আবর্জনার পরিমাণ কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে এবং সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সাংসদ একাধিকবার ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।
ঢাকা উত্তরের এই ওয়ার্ডের অন্যতম প্রধান সমস্যা ভাঙাচোরা সড়ক। অ্যাভিনিউ-৫, ব্লক-বি ও সির ভেতরের বিভিন্ন সড়ক, ব্লক-ডির নিমতলী বাজার, জল্লাদখানা মোড়, মিরপুর বেনারসি পল্লির ১ নম্বর গেটের সড়ক এবড়োখেবড়ো ও খানাখন্দে ভরা। সড়কের বেহাল দশা ছাড়াও যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, ওয়াসার পনিতে ময়লা-দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব এই ওয়ার্ডের অন্যতম সমস্যা।
ওই দিন দেখা যায়, বেনারসি পল্লির ১ নম্বর গেটের এক পাশে বিশাল গর্ত খোঁড়া। গর্তের সামনে আবর্জনা ফেলা। অপর পাশে এখনো জমে আছে কয়েক দিন আগের বৃষ্টির পানি। গেটের নিচের সড়কটি ভাঙাচোরা ও এবড়োখেবড়ো। সড়ক ধরে কিছুটা এগোতেই সড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে।