১২৩ দিনের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার আজ সবচেয়ে কম

দেশে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরুর দিকে সংক্রমণ শনাক্তের হার কম ছিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক দিন ছাড়া দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত। গত ২১ আগস্ট থেকে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচেই থাকছে।

আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ।  গত এক সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ছিল ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ।

দৈনিক সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১১ মে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতিদিনই শনাক্তের হার ছিল এর চেয়ে বেশি। দিনের হিসেবে যা ১২৩ দিন। অর্থাৎ, চার মাসের বেশি সময় পর আজ দেশে শনাক্তের হার সবচেয়ে কম।  

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের যে তথ্য সরকার দিচ্ছে সেটি সংক্রমণের বাস্তবচিত্র নির্দেশ করছে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টেস্টিং (পরীক্ষা), ট্রেসিং (সন্দেহভাজন রোগী শনাক্তকরণ), আইসোলেশন (বিচ্ছিন্নকরণ)—এগুলোর কোনোটিই দেশে সঠিকভাবে হচ্ছে না। লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে উদাসীনতা বেড়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক চিত্র বলছে, সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল এখন এশিয়ার দিকে। দেশে শনাক্ত রোগীদের ট্রেসিং ক্রমাগত কম হওয়ায় সম্ভাবনাময় রোগীরা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। যাদের উপসর্গ মৃদু তারা পরীক্ষাও করাতে চাচ্ছেন না। সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যাতে সংক্রমণ কমতে পারে।

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার কমলেও করোনায় মৃত্যু কমছে না। আজ করোনায় মারা গেছেন ৩৪ জন। এর আগে গত বৃহস্পতি ও বুধবার করোনায় মৃত্যু ৪০-ছাড়িয়েছিল। কোনো দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না, তা বোঝার জন্য কিছু নির্দেশক নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তার একটি হলো টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু কমতে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশে টানা মৃত্যু কমতে দেখা যাচ্ছে না।
দেশে আজ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫৮ জনের। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২ জনের। দেশে এখন পর্যন্ত পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। শুরুর দিকে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার কম ছিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক দিন বাদে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০-২৫ শতাংশ। গত ২১ আগস্ট থেকে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে থাকছে।

শনাক্তের হার কমে আসার কিছু কারণ রয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তারা বলছেন, লোকজন বিদেশ যাওয়ার আগে পরীক্ষা করাচ্ছেন। তাদের প্রায় শতভাগ করোনা নেগেটিভ হচ্ছেন। নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার আগে করোনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। করোনা শনাক্ত অনেক রোগী আইসোলেশন শেষে সুস্থ হয়েছেন কী না সেটি দেখতেও পরীক্ষা করাচ্ছে। ফলে শনাক্ত রোগী আনুপাতিক হারে কমে এসেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ও রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু সংক্রমণ কমছে, এখনো সেটা বলা যাবে না। আরও কিছুদিন দেখতে হবে। এই ভাইরাসের যে চরিত্র, তাতে আপনাআপনি সংক্রমণ কমবে না। কখনো কখনো সংক্রমণের গতি ধীর হতে পারে। কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে আসতে অনেক সময় লাগবে।

আরও পড়ুন