১৫ জুন জনশুমারি শুরু, তালিকায় আসবেন বিদেশিরাও

দেশের ষষ্ঠ জনশুমারিতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশের জনসংখ্যা কত, তা জানতে প্রতিটি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সরকারি সংস্থাটি জানিয়েছে, ষষ্ঠ জনশুমারি শুরু হবে আগামী ১৫ জুন। চলবে ২১ জুন পর্যন্ত।

আগের পাঁচটি আদমশুমারির তথ্য খাতা-কলমে সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে এবারের জনশুমারি। আর এবারই প্রথম বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের শুমারির আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

আজ বুধবার ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ নিয়ে এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিএস। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এখন ১০ বছর পরপর জনশুমারি হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে ১০ বছর পরপর আর শুমারি করতে হবে না। সব সময় জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য জানা যাবে। সেই প্রযুক্তি বের হচ্ছে।’ তিনি বলেন, জনশুমারির তথ্য সংগ্রহের পর যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হবে। তবে দ্রুত করতে গিয়ে যাতে বিশুদ্ধতা নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বিবিএসকে আহ্বান জানান তিনি।

জনশুমারির জন্য এর আগে তিন দফা সময় দিয়েও পরে পিছিয়েছে বিবিএস। প্রথমবার শুমারির জন্য গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি সময় ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও তৃতীয় দফায় ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ট্যাব কেনাকাটার জটিলতার কারণে তৃতীয় দফার সময়ও স্থগিত করা হয়। এবার নতুন করে শুমারির সময় ঠিক করা হলো জুন মাসে।

এর আগের পাঁচটি আদমশুমারির তথ্য নেওয়া হয়েছিল জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে। এবারই প্রথম জুন মাসে শুমারি হবে। ওই সময় দেশে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। এ বিষয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘আশা করছি, শুমারির সময় সারা দেশ বৃষ্টিমুক্ত থাকবে। তারপরও প্রকৃতির ওপর কারও হাত থাকে না। যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে। তবে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় গণনাকারীদের ছাতা সরবরাহ করা হবে।’

কেউ যদি গণনা থেকে বাদ পড়েন সে ক্ষেত্রে কী হবে, জানতে চাইলে দিলদার হোসেন বলেন, গণনা থেকে কেউ বাদ পড়লে অভিযোগকেন্দ্র থাকবে। বাদ পড়া ব্যক্তি অভিযোগকেন্দ্রে যাবেন। তারপর তাঁকে গণনায় আনা হবে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ ও ২০১১ সালে পঞ্চম জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় বিবিএস জানায়, ভাসমান মানুষের তথ্য সংগ্রহে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ করা হবে। যিনি যেখানে থাকেন, সেখান থেকেই তথ্য সংগ্রহ হবে। একই ব্যক্তির একাধিকবার তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ নেই।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দিলদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে কত বিদেশি কাজ করেন, এবারের শুমারির মাধ্যমে তা জানা যাবে। তা ছাড়া বিদেশে কত বাংলাদেশি বসবাস করেন, সেটিও জানা যাবে। প্রতিটি খানায় গিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কার পরিবারে কতজন বিদেশে থাকেন। প্রশ্নপত্র সেভাবে তৈরি করা হয়েছে।’

তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ট্যাবের সঙ্গে ভৌগোলিক তথ্যবিজ্ঞান (জিআইএস) ব্যবস্থার সংযোগ থাকবে বলে জানান দিলদার হোসেন। ফলে গণনাকাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে জনগণের তথ্য হ্যাক করারও সুযোগ নেই।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম।