১৫০ শতাংশ পর্যন্ত সম্মানী ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য আবেদনের সময়সীমা আবারও বৃদ্ধি এবং এ বিষয়ে প্রতি বিভাগে একটি করে বিশেষ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্যে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি

বাংলাদেশ সরকার

খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে। শ্রেণিভেদে এই ভাতা বর্তমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা, ২০১৬-এর খসড়া এবং খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতা’ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠদের সম্মানী ভাতা মাসিক ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার, বীর উত্তমদের ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার, বীর বিক্রমদের ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার ও বীর প্রতীকদের ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের জন্য সম্মানী ভাতা ২৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার, শহীদ পরিবারের জন্য ভাতা বাড়িয়ে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার এবং মৃত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ভাতা বাড়িয়ে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ‘এ’ শ্রেণিভুক্তদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার, ‘বি’ শ্রেণির জন্য ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার, ‘সি’ শ্রেণির জন্য ১৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার এবং ‘ডি’ শ্রেণির জন্য ৯ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। যাঁরা ৯৬ থেকে ১০০ শতাংশ পঙ্গু তাঁদের ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত ও তুলনামূলক কম পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের বাকি তিন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই ভাতা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যাঁরা দুই ধরনের ভাতাপ্রাপ্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে যে ভাতাটি বেশি, তাঁরা সেটি পাবেন। অর্থাৎ একটি ভাতা পাবেন।

খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার মিলিয়ে আট হাজারের কিছু বেশি এই ভাতা পান। সভায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বৈঠকে বিশেষ মেধা ও যোগ্যতার অধিকারী গবেষক বা বিজ্ঞানীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা-সংক্রান্ত একটি অবস্থানপত্র গ্রহণ করা হয়। এই অবস্থানপত্রটি উত্থাপন করে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। এতে এই ধরনের বিজ্ঞানী-গবেষকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব উল্লেখ রয়েছে। তবে বয়স কত হবে, তা বলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অবস্থানপত্রে বয়স বাড়ানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৈঠকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আর্থিক পরিধি বাড়িয়ে আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আইন, ২০১৬-এর খসড়া ও জাতীয় লবণনীতির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক ও আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুপা হক স্থান পাওয়ায় মন্ত্রিসভায় অভিনন্দন প্রস্তাব পাস হয়। আর থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল আদুলাদেজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাস হয়।

এদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য আবেদনের সময়সীমা আবারও বৃদ্ধি এবং এ বিষয়ে প্রতি বিভাগে একটি করে বিশেষ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্যে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। মন্ত্রিসভার সূত্র জানায়, এই আইন বারবার সংশোধন করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরক্ত হন। এ কারণেই মূলত গতকালের সভার আলোচ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এটি। এর আগেও এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।