১৮-র আগে বিয়ে বৈধ নয়

চুক্তি আইন অনুযায়ী ১৮ বছর হওয়ার আগে এ দেশের নাগরিকেরা কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে না। এ কারণে এই বয়সের আগে বিয়ে হলে তা-ও বৈধ হবে না। এ ক্ষেত্রে কোনো ‘বিশেষ বিধান’ রেখে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল পাশ বিদ্যমান আইনগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার শামিল।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘১৮-র আগে বিয়ে নয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ এবং ‘জন্টা ক্লাব অব গ্রেটার ঢাকা’ যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিতালী জাহান বলেন, ‘চুক্তি আইন ১৮৭২’ অনুযায়ী ১৮ বছরের আগে কোনো ব্যক্তি কোনো চুক্তিতে সাক্ষর করতে পারে না। এ ছাড়া ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১’ অনুযায়ী বিয়ে বৈধ হতে হলে ছেলেদের বয়স অন্তত ২১ এবং মেয়েদের বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

আলোচনায় নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবির বলেন, ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর বিশেষ বিধান মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। বিয়ে কেবল সন্তান উৎপাদনের বিষয় নয়, এটি একটি পরিবার গঠন ও দায়িত্ব পালনেরও বিষয়। নারী-পুরুষকে এ দায়িত্ব পালন সক্ষম করতে হলে প্রাপ্ত বয়স হওয়া পর্যন্ত সময় দিতে হবে। দুই একটা ব্যতিক্রম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিধান’ পুরো জাতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। বিল পাশ হলেও সবার মঙ্গলের জন্য আইনটা বাতিল করা যায়।

অনুষ্ঠানে লেখক ও বেসরকারি সংস্থা ‘সংযোগ বাংলাদেশ’-এর প্রধান নির্বাহী সাদিয়া নাসরিন বলেন, দীর্ঘ দিনের মাঠ পর্যায়ে কাজের ফলে দেখেছি কেবল দারিদ্র্যের ভয়ে নয়, নানা কারণে গ্রামে মায়েরা মেয়েদের শিশু বয়সে বিয়ে করান। ‘বিশেষ বিধান’ রাখার ফলে সরকারের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাপ্রাপ্ত হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের’ নির্বাহী পরিচালক সাঈদা রোকসানা খান নারী দিবসের তাৎপর্য এবং ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএন কমিটি জন্টার ডিস্ট্রিক্ট চেয়ার রুবিনা হোসাইন এবং জন্টা ক্লাবের সভাপতি সোনিয়া পন্নী।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘আমরাই পার’ ক্যাম্পেইন এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশের পলিসি ও অ্যাডভোকেসির প্রধান সামিয়া আহমেদ।