২০২০ সালে বাস্তুচ্যুত ৪৪ লাখ

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইডিএমসির হিসাবে বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় তৃতীয় বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণ।

  • ২০২০ সালে বিশ্বে ৪ কোটি ৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তচ্যুতির শিকার হয়েছেন।

  • তালিকায় প্রথমে চীন, দ্বিতীয় ফিলিপাইন ও চতুর্থ ভারত।

বর্ষা শুরু হতে না হতেই সিরাজগঞ্জ ও চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের আঘাতে উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপগুলোতে বিপুল পরিমাণে মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হয়েছে। উজান থেকে আসা আগাম ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এমন সব দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপুল মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হচ্ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ঘরবাড়িছাড়া হওয়া মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট ২০২১’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সংঘাতে ২০২০ সালে বিশ্বের ১৪৯টি দেশ ও ভূখণ্ডের ৪ কোটি ৫ লাখ মানুষ নতুন করে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

এই সময়ে বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৩০ জন। তাদের প্রায় সবাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে। সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা ২৩০।

এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, সত্তরের দশকে বাংলাদেশের নোয়াখালী ও

ভোলা এলাকার মানুষ নদীভাঙন এবং ঝড়ের কারণে বেশি পরিমাণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতো। এখন হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী এলাকার মানুষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেড়িবাঁধগুলো ঠিকমতো মেরামত করা গেলে উদ্বাস্তু হওয়ার পরিমাণ কমে আসত। সে ব্যাপারে বেশি নজর দিতে হবে।’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫০ লাখ। বিশ্বে এতসংখ্যক মানুষ এর আগে কখনো উদ্বাস্তু ছিল না। গত এক বছরে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া ও সংঘাত বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সংখ্যা বাড়ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বে নতুন করে যাঁরা উদ্বাস্তু

হতে বাধ্য হয়েছে, তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এ অঞ্চলে এই সময়ে প্রায় ৯২ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। ২০২০ সালে মে মাসে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও ভুটানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। ওই বছর

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল এটি, এতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে মৌসুমি বৃষ্টি ও বন্যার কারণেও মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অবশ্য মনে করে, দেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা কোনোভাবেই ৪৪ লাখ হবে না। কারণ, এই প্রতিবেদনে বন্যায় বাস্তুচ্যুত মানুষকে আমলে নেওয়া হয়। বন্যাকবলিত মানুষ দুর্যোগ শেষে আবার বাড়িতে ফিরে যায়। ফলে তারা কোনোভাবে বাস্তুচ্যুত হিসেবে চিহ্নিত হবে না।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নদীভাঙনের কারণে ঘরবাড়িছাড়া মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নানা ধরনের পুনর্বাসনের কাজ করছি। যারা বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, তারা অন্য স্থানে আবার পুনর্বাসিত হচ্ছে।’

আইডিএমসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০২০ সালে ৩ কোটি ৭ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এবং ৯৮ লাখ মানুষ সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে। উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উদ্বাস্তু হয়েছে ৫০ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফিলিপাইনে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং ১ লাখ ১১ হাজার মানুষ সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে।

চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ এবং সংঘাতে ৩ হাজার ৯০০ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো রয়েছে এ তালিকার পঞ্চম স্থানে। সেখানে ২ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এবং ২২ লাখ ৯ হাজার মানুষ সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে।