২০৩৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই রিপোর্টে মূলত সামনের বছর ও আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

সংসদ নেতা জানান, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। আলু উৎপাদনে সপ্তম। আম উৎপাদনে সপ্তম। পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। চাষের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।

সরকারি দলের সাংসদ কাজিম উদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে, দেশে করোনাভাইরাসসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত ও নদীভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না—এ লক্ষ্য সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করে একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

সরকারি দলের সাংসদ আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য সাভারের বারইগ্রাম ও দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২ দশমিক শূন্য ১ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য স্টেডিয়ামসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণে ৪৯৯ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া ও চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রবাসী–অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে করোনাকালে চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র পাঠানো হয়। এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের যাবতীয় দেনা–পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতন–ভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোয় কোভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।

আহসানুল হকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই তাঁর সরকার সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। যার ফলে এ পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুর হার ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।