২১ আগস্ট হামলায় খালেদা জড়িত দাবি করে আদালতে মামলা, চার ঘণ্টা পর খারিজ

সিএমএম আদালত
ফাইল ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে মামলা নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আবেদনকারীর জবানবন্দি গ্রহণের চার ঘণ্টার মধ্যে তা খারিজ করে দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

এর আগে বেলা একটার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। আদালত তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করে বিকেলে আদেশের জন্য সময় ঠিক করেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তা খারিজ করা হয়।

মামলার বাদী এবি সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে খালেদা জিয়াকে আসামি করে আদালতে নালিশি মামলা করেছিলাম। আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আগামী রোববারই উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’ তিনি জানান, বেলা একটার দিকে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। বিকেল পাঁচটার দিকে মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।

নালিশি মামলায় এবি সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং হুকুমদাতা হলেন খালেদা জিয়া। ফাঁসি কার্যকর হওয়া জঙ্গি মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে ‘থলের বিড়াল’ বের হয়ে এসেছে।

এবি সিদ্দিকী দাবি করেন, ২০০৪ সালের ১৫ আগস্টের আগে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মুফতি হান্নান, ডিজিএফআই এর তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, আলী আহসান মুজাহিদসহ প্রশাসনের লোকজন গোপন বৈঠক করেন। বৈঠক সিদ্ধান্ত হয়, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সবাইকে হত্যা করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর যখন খালেদা জিয়া জানতে পারেন, শেখ হাসিনা মারা যাননি, তখন তিনি মামলার আলামত নষ্টের জন্য নির্দেশ দেন। মিডিয়ায় খালেদা জিয়া বলেন, হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে সঠিক বিচারের প্রক্রিয়াকে কবর দেন। ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি কখনো এড়াতে পারেন না।

মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, শেখ হেলাল ও মাহবুব আবদুল্লাকে সাক্ষী করেছেন এবি সিদ্দিকী।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়ে ২০১৮ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত । মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই মামলায় জেল আপিল করেছেন। মোট আপিলের সংখ্যা ৪৪। এর বাইরে আরও ৩৯টি নিয়মিত আপিল করেছেন দণ্ডিত ব্যক্তিরা।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত মামলা দুটি এখন দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। হাইকোর্টে শুনানি পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি হয়েছে। এখন পেপারবুক যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর বেঞ্চ নির্ধারণের পালা। তারপর শুনানি শুরু হবে।