৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

ইলিশ মাছ
ফাইল ছবি

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। গত বছর এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার তা এগিয়ে আনা হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা তিনটায় মৎস্য অধিদপ্তরে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত চাঁদপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশবিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার নদ-নদীতে কম আসায় জেলেরা তেমন ইলিশ পাননি। ফলে জেলেদের লাভের কথা বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন, যা ২০ অক্টোবরের পর থেকে শুরুর প্রস্তাব ছিল।

তবে মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পেছানো হবে আত্মঘাতী বলে প্রথম আলোর কাছে মতামত দিয়েছিলেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ২১ সেপ্টেম্বর ‌‘ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ধন্দ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে ৬ অক্টোবর অমাবস্যা সামনে রেখে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু করে ২০ অক্টোবর পূর্ণিমা তিথির পর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ক্ষুদ্র জেলেরা মতামত দিয়েছিলেন।

জেলেরা বলছেন, ৬ অক্টোবরে অমাবস্যায় প্রচুর ইলিশ নদ-নদীতে ছুটে আসবে। তাই এই অমাবস্যাকে সামনে রেখে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু করা না গেলে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ নদীতে ফেরার পথে মারা পড়বে। ইলিশের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ জন্য ৬–২০ অক্টোবর পূর্ণিমা ধরেই এই নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে।

বরগুনার তালতলী উপজেলার জেলে দুলাল মিয়া এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আশ্বিনা পূন্নিমা-আমবইস্যায়ই ইলশা মাছের ডিম ছাড়নের সময়। হেই সময় যদি অবরোধ না দেয় তাইলে এহন যে দু-চাইরডা ইলশা গাঙ্গে পাই আগামীতে হেইয়্যাও থাকপে না। সব বড় ট্রলারের জালে আটকা পড়বে।’

নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা হয় বরগুনার তালতলী উপজেলার জেলে দুলাল মিয়ার সঙ্গে। নিষেধাজ্ঞা সময়সীমার কথা শুনে দুলাল বলেন, ‌‘সরকার একটা উপযুক্ত কাজ করছে। আমরা খুশি।’

নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকার, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বুধবারের বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, নিষিদ্ধকালে কোনোভাবেই দেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণের অবৈধ প্রচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না। এ সময়ের মধ্যে প্রজনন ক্ষেত্রে কোনোভাবেই মা ইলিশ ধরা যাবে না।

বাংলাদেশে ২০০৩-২০০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে ও পরে মিলিয়ে ১১ দিন মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকেই এর সুফল দেখতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। তখন তাঁরা গবেষণায় দেখতে পান, শুধু পূর্ণিমায় নয়, এই সময়ের অমাবস্যাতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে। পরে পূর্ণিমার সঙ্গে অমাবস্যা মিলিয়ে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু হয়। গত অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৬৬ ভাগ এসেছে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো থেকে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।