৫০০ কোটি টাকার চিনি নিয়ে প্রশ্ন সংসদীয় কমিটির

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার চিনি আমদানি করেছিল চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। দুই বছর ধরে সে চিনি গুদামে পড়ে আছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কার স্বার্থে, কেন এই চিনি কেনা হয়েছে সে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। তবে এ নিয়ে করপোরেশন বা শিল্প মন্ত্রণালয় কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সংসদীয় কমিটি চিনি কেনার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বুধবার বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, এই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি চিনিকল লোকসানে আছে। লাভ করছে শুধু কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি। চিনিকলগুলো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারছে না। গত বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ টন। আর উৎপাদন হয়েছে ৬৮ হাজার টন। চিনিকলগুলোতে আখচাষিদের বকেয়া পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত আখচাষিরা করপোরেশনের কাছে পাবেন ১১৯ কোটি টাকা, আর বীজ সরবরাহকারীরা পাবেন প্রায় ৩১ কোটি টাকা। কমিটি ঈদের আগেই আখচাষিদের পাওনা মিটিয়ে দিতে বলেছে। এ ছাড়া কমিটি আখ কাটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাড়াই এবং ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা যায় কি না, সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে।

বৈঠকে বেসরকারি চিনি কারখানা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে বলা হয়, শর্ত অনুযায়ী তাদের ৫০ শতাংশ চিনি দেশের বাজারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ দেশের বাইরে বিক্রি করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তারা সব চিনি দেশের বাজারেই বিক্রি করছে। শর্ত ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করপোরেশন চিনি আমদানি করে। সেই চিনি এখনো গুদামে পড়ে আছে। কেন, কার স্বার্থে এই চিনি আমদানি করা হয়েছিল—কমিটি সে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তবে বৈঠকে সংশ্লিষ্টরা এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কমিটি এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সচিব বৈঠকে বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারছেন না। পরবর্তী সময়ে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কমিটিকে জানাবেন।

আ স ম ফিরোজ বলেন, কমিটি ঈদের আগেই আখচাষিদের বকেয়া পরিশোধ করাতে বলেছে। করপোরেশন এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি ১ কোটি ৬ লাখ টাকা লাভ করেছে। অন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কেরুর লাভ ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেটা কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ তে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কেরুর লাভ ছিল ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, কমিটি চিনিকলগুলোর লোকসান কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া এবং ‘বাই প্রোডাক্ট’ উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুল হাকিম, মুহিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।