৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনীর রায় বহাল

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তবে হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হলো। তবে হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়গুলো জানা যাবে।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও এম আমীর-উল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন।

রায়ের পর সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায়ে ১৫ দফা নির্দেশনা ও সাতটি সুপারিশ করা হয়েছিল।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাচ দিয়ে নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তাঁর আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে প্রভৃতি।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রুবেল মারা যান। ওই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের রায়ে হাইকোর্ট কয়েকটি সুপারিশসহ সিআরপিসির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশ দেন। আর যতদিন আইন সংশোধন না হচ্ছে, ততদিন পুলিশকে মেনে চলার জন্য কয়েকটি অন্তবর্তী নির্দেশনা দেন।

পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় সরকার। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ সরকারের আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই অন্তবর্তী নির্দেশনাগুলো আপিল বিভাগ স্থগিত করেননি। সরকারও নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এরপর সরকার আপিল করে। ১৭ মে আপিলের শুনানি শেষ হয়। আজ রায়ের দিন ধার্য ছিল।