৭ খুন মামলার রায় আজ অপেক্ষায় সারা দেশ

.
.

২৭ এপ্রিল ২০১৪। বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে খবর বের হলো র‍্যাব-১১-এর অধিনায়কসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা। একসঙ্গে সাতজনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে মানুষ। ঘটনার সঙ্গে র‍্যাবের একটি ইউনিটের প্রায় সবার জড়িত থাকার খবর সারা দেশের মানুষকে হতবাক ও উদ্বিগ্ন করে।
ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পর প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের একটি টেলিফোন কথোপকথন প্রকাশ পায়। যদিও ঘটনার পর থেকেই সাংসদ শামীম ওসমান টেলিভিশনের টকশোতে র‍্যাবকে দায়ী করে আসছিলেন। নূর হোসেন পালিয়ে যান ভারতে। আবার আসামি র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ একজন মন্ত্রীর জামাতা। সব মিলিয়ে শুরুতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও সন্দেহ-শঙ্কা দানা বাঁধে মানুষের মনে।
শুরুতে অভিযুক্ত র‍্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করে পুলিশ। তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার, তাঁদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর গতি পায় মামলার তদন্ত। একে একে বেরিয়ে আসে অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের কাহিনি এবং নেপথ্য কারণ। বিচারকাজ শেষে আজ সোমবার আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আদালত। রায়ের অপেক্ষায় সারা দেশের মানুষ।
এর আগে ১১ মাস তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র‍্যাবের সাবেক ২৫ জন কর্মকর্তা, সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। এরপর প্রায় সাত মাসে ৩৮ কর্মদিবস মামলার বিচারকাজ চলে। গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশের সব মানুষ এ মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের কাজ ছিল মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। তাঁরাই যদি এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান, সেটা অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।’
আসামিরা

অভিযুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন র‍্যাবের সদস্য। তাঁরা হলেন চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর। কারাবন্দী বাকি আসামিরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)।

র‍্যাব-১১-এর সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি এখনো পলাতক। তাঁরা হলেন করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।

অপহরণ ও লাশ ভেসে ওঠা

০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুঁইগড় এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হন পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। ৩৫ ঘণ্টা পর তিনি অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তি পেলেও এখনো জানা যায়নি কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল।

ওই অপহরণের আতঙ্ক তখনো কাটেনি। এর মধ্যেই ২৭ এপ্রিল একই সড়ক থেকে একযোগে অপহরণের শিকার হন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক মো. ইব্রাহিম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম। প্রথম দুজন একটি গাড়িতে ও পরের পাঁচজন আরেকটি গাড়িতে ছিলেন।

৩০ এপ্রিল বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করে। পরদিন অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত প্রত্যেকের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তা বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ। দফায় দফায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নজরুলের অনুসারীরা। আইনজীবী চন্দন সরকারের হত্যার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে আন্দোলনে নামেন।

মামলা ও চাকরিচ্যুতি

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়। বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

কোটি টাকার বিনিময়ে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে নিজস্ব বাহিনীতে ফেরত নিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর র‌্যাবের এই তিন কর্মকর্তাকে আটক করে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কেন মামলা নেওয়া হবে না—এই বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা বিজয় কুমার পাল।

হাইকোর্টে রিটের পক্ষে শুনানি করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। ২০১৪ সালের ১১ মে মামলার শুনানি শেষে হাইকোর্ট চাকরিচ্যুত র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন। ছয় দিন পর ২০১৪ সালের ১৬ মে ঢাকার সেনানিবাস থেকে চাকরিচ্যুত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেন এবং পরদিন লে. কমান্ডার এম এম রানাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা পরে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

তিন কর্মকর্তার জবানবন্দিতে র‌্যাব-১১-এর অন্যান্য সদস্য ও কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে এলে পর্যায়ক্রমে তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অন্য র‍্যাব সদস্যরাও আদালতে জবানবন্দি দেন। মোট ২১ জন আসামি দায় স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সাক্ষী হিসেবে র‌্যাবের ১৪ জনসহ ২০ জন আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালতে সাক্ষ্য দেন ১০৬ জন সাক্ষী।

নূর হোসেন পর্ব

সাত খুনের সপ্তাহ দুয়েক পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে সাংসদ শামীম ওসমানের ১০৩ সেকেন্ডের একটি কথোপকথন প্রকাশ পায়। ঘটনার দুই দিন পর নূর হোসেন ফোন করেছিলেন শামীম ওসমানকে। তাতে শামীম ওসমানকে ‘বাপ’ ডেকে দিল্লি যেতে সাহায্য চান নূর হোসেন। ‘চিন্তা কোরো না, তুমি অপরাধ করো নাই’ বলে নূর হোসেনকে আশ্বস্ত করেছিলেন শামীম ওসমান।

এরপর ওই বছরের ১৪ জুন ভারতের কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন নূর হোসেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।

তারেক সাঈদের বিলাসী বন্দিজীবন

অন্যতম আসামি র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদের বিলাসী বন্দিজীবন নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর বের হয়। তারেকের শ্বশুর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া)। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারেক সাঈদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তাঁর জন্য ২০১৪ সালের ৭ জুলাই পুরান ঢাকার একটি দোকান থেকে টেলিভিশন, ফ্রিজ, পানির ফিল্টার, এয়ারকুলার ফ্যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়।

এরপর গত বছরের ৩ জানুয়ারি তারেক সাঈদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি পালিয়ে যেতে পারেন বলে পুলিশ একটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর গত জুনে তারেককে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে ঘটনার বিবরণ

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা করে আদায় করতেন র‌্যাব-১১-এর আদমজী ক্যাম্পের তৎকালীন কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন। বিনিময়ে নূর হোসেন পেতেন চাহিদামাফিক অবৈধ সুযোগ-সুবিধা। সাত খুনের আগে ২১ দিনে মেজর আরিফের সঙ্গে টেলিফোনে ২৭ বার কথা বলেছিলেন নূর হোসেন।

কাউন্সিলর হয়ে নূর হোসেন অবৈধভাবে জমি দখল, শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, কাঁচপুর সেতুর নিচে পাথর-বালুর ব্যবসা, মদের আড়ত, যাত্রার নামে হাউজি, জুয়া খেলা, প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে প্রতিদিন ৩০-৩৫ লাখ টাকা আয় করতেন। মেজর আরিফ হোসেন আদমজী ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্ব নেওয়ায় নূর হোসেনের অফিসে প্রতি মাসে ৮-১০ বার যেতেন। আরিফ ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন। এই সুযোগে নূর হোসেন তাঁর প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে আরিফের সাহায্য নেন। তাঁদের পরিকল্পনা অনুসারে নজরুল ইসলাম ও তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজনকে অপহরণ করা হয়। নজরুলসহ পাঁচজনকে অপহরণ করার দৃশ্য পেছন থেকে আসা আইনজীবী চন্দন সরকার দেখে চিৎকার শুরু করেন। তখন লে. কমান্ডার রানা টানাহেঁচড়া করে চন্দন সরকার ও তাঁর চালক ইব্রাহিমকে র‍্যাবের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেন। এরপর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকারের কারটি র‍্যাবের চালক সিপাহি মিজানকে সঙ্গে নিয়ে লে. কমান্ডার এম এম রানা ঢাকার গুলশানের নিকেতনে ফেলে রেখে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি নূর হোসেন পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে র‌্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যদের ব্যবহার করে তাঁর প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করেন। পরে তাঁদের হত্যা ও লাশ গুম করেন।

তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এলিট ফোর্সের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য অন্যের প্ররোচনায় অধীন কর্মকর্তা ও সদস্যদের দ্বারা অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের নির্দেশ দেন।

আরিফ হোসেন এলিট ফোর্সের ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্যের প্ররোচনায় অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে উপস্থিত থেকে নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করেন। আবার সঙ্গে থাকা অন্য র‌্যাব সদস্যদের একই অপরাধ করার আদেশ দেন।

এম এম রানা এলিট ফোর্সের ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব থেকে র‌্যাব-১১ অধিনায়কের নির্দেশে মেজর আরিফ হোসেনকে তাঁর কোম্পানির সদস্যদের দিয়ে এবং নিজে উপস্থিত থেকে সাতজনকে অপহরণের কাজে সহায়তা, নিহত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট কার লোকচক্ষুর আড়াল এবং হত্যা ও লাশ গুমের কাজে ক্যাম্প থেকে ট্রলার দিয়ে সহায়তা করেন।

র‍্যাবের এসআই পূর্ণেন্দু বালা ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, হীরা, সৈনিক আল আমিন শরিফ, আবদুল আলীম, মহিউদ্দিন মুন্সী, কনস্টেবল শিহাবউদ্দিন, সিপাহি আবু তৈয়বসহ মেজর আরিফের নির্দেশে সাতজনকে অপহরণ, হত্যা, লাশ গুম করেন।

সার্জেন্ট এনামুল কবির, হাবিলদার এমদাদুল হক, নাছিরউদ্দিন, এএসআই বজলুর রহমান, সৈনিক তাজুল ইসলাম মেজর আরিফের নির্দেশে নদীতে ডোবাতে লাশের সঙ্গে বাঁধার জন্য প্লাস্টিকের বস্তায় ইট ভর্তি করে প্যাকেট তৈরি করেন।

সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর মেজর আরিফের হুকুমে র‌্যাবের ক্যাম্প থেকে মোটরসাইকেলযোগে পলিথিন আনেন। ওই সব পলিথিন সাতজনের মুখে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানার নির্দেশে করপোরাল মোখলেছুর রহমান, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, বাবুল হাসান, সৈনিক নূরুজ্জামান ও হাবিবুর রহমান অপহরণ, বিআইডব্লিউটিএর ল্যান্ডিং ঘাটে পাহারা দিয়ে হত্যার কাজে সহায়তা করেন।

নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আসামি শাহাজাহান, মুর্তজা জামান, আলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার, সেলিম ছানাউল্লাহ, জামালউদ্দিন, রিয়াজ কাঁচপুর বিআইডব্লিউটিএ ল্যান্ডিং ঘাটে এবং এর আশপাশে নূর হোসেনের নির্দেশে পাহারা দেন, যাতে র‌্যাবের লোকজন নির্বিঘ্নে সাতজনকে হত্যা ও লাশ গুম করতে পারেন। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় আসামি রিয়াজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দৃষ্টান্তমূলক রায়ের প্রত্যাশা

নারায়ণগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে সকল কিছু প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।’

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘আসািমদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আর কেউ এমন নৃশংসতার সাহস পাবে না।’ তিনি পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বলেন, ‘আমরা স্বজন হারিয়েছি। আদালতের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে এমন নজির স্থাপন করতে যেন আর কেউ এ ধরনের হত্যাকাণ্ড না ঘটাতে পারে।’

আসামি তারেক সাঈদের আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। আমরা মামলার ত্রুটি-বিচ্যুতি আসামিদের পক্ষে ন্যায়বিচারের পক্ষে আইনিভাবে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছি। আমরা রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।’