৭৫ খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা

মুক্তিযোদ্ধাদের মেডেল পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একটি সম্মাননা সনদও দেওয়া হয়
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ৭৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ৩৫ মুক্তিযোদ্ধাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। আর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ২৭ মুক্তিযোদ্ধাকে এবং বাকি যাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি, তাঁদের প্রতিনিধিকে সম্মাননার বিশেষ মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাতে বিশেষ স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বিশেষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম–আন্দোলনের পথ পেরিয়েই আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের কাছে জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা কখন, কীভাবে যুদ্ধে গেছেন; জীবন দিয়েছেন, অবদান রেখেছেন—এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাই এগুলো সংরক্ষণ করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে।’

স্পিকার আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে এক অনন্য বিস্ময়। বাংলাদেশ এখন ‘ডেভেলপমেন্ট মিরাকল’ হিসেবেই পরিচিত। এখন সময় এসেছে সামনে তাকানোর। বিজয়ের ৫০ বছরের এ সময়ে আগামী ৫০ বছরের পথ রচনা করতে হবে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মনেতারা সহায়তা করেছেন জানিয়ে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশে যখন অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী এ দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ধর্মযাজক—সবাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তখন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মনেতারা সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিওর কাছে যখন যেখানে সহযোগিতা চেয়েছি, তখন পাশে পেয়েছি। সবাই মিলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবাই রক্ত দিয়েছেন। ভারতের ১৬ হাজার সৈনিকও এ দেশের জন্য আত্মদান করেছেন। একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক (ফাদার ইভান্স) নবাবগঞ্জের কলাকুপায় শাহাদাত বরণ করেছেন। তাই এ দেশে শুধু মুসলমানের রক্ত ঝরেনি। বিজয় দিবসের আজকের যে আয়োজন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মনে করি, এর চেয়ে বড় সম্মান আর হতে পারে না।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপস সম্মেলনীর (সিবিসিবি) সেক্রেটারি জেনারেল বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি। ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজের সভাপতিত্বে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি।

এ ছাড়া অতিথি হিসেবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাংসদ জুয়েল আরেং, ঝর্না গ্লোরিয়া সরকারসহ আটটি ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপরা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিষ্টান চার্চের প্রতিনিধি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।