৮ মাসেও পাওনা পায়নি, আন্দোলনে জুটেছে ‘আশ্বাস’

৮ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন এ-ওয়ান বিডি'র শ্রমিকেরা। আজ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

আট মাস পেরোলেও বকেয়া বেতন পাচ্ছেন না সাভারের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) এ-ওয়ান (বিডি)-এর শ্রমিকেরা। কারও কারও বেতন বাকি দুই থেকে তিন মাসের। বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান পালন করেছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। সন্ধ্যায় এই কর্মসূচি শেষ হয়। তবে ২৫ দিনের আশ্বাস ছাড়া বেতন জোটেনি তাঁদের কপালে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাথে আজ সারা দিন চলছিল শ্রমিকদের এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। শ্রমিকেরা বলছেন, এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তাঁরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেছেন। তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাস বন্ধ এখনো পুরোটা দেওয়া হয়নি। কেবল মাসের পর মাস তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
এ ওয়ান বিডি-তে হেলপার পদের কাজ করতেন লাকী আক্তার। তাঁর বাসা গাজীপুরের শ্রীপুরে। নিজের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখে পানি চলে আসছিল। লাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পথে বসে আছি ১১০০ শ্রমিক। মানুষ হিসেবে আমাদের কোনো মূল্য নাই। এত পরিশ্রম, কষ্ট করার পরও আমাদের বেতন হয়নি।’ তিনি বলেন, নোটিশ দিয়ে, মোবাইলে মেসেজ দিয়ে ১৮ বার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার। তবে পুরো বেতন এখনো কপালে জোটেনি।

একই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নিটিং অপারেটর মো. শরীফুল ইসলাম তাঁর মুঠোফোনের বার্তা দেখিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ২০ আগস্টও ফোনে মেসেজ আসে বকেয়া বেতন দেওয়া হবে, কারখানায় আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কারখানায় যাওয়ার পর বলা হয়, বেতন হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আমাদের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করার মানে কি? বিকেলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি এসে সময় চাওয়া হয়। আমরা ২৫ দিনের সময় দিয়েছি।’

সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকদের অবস্থান শুরু হয়। মঙ্গলবার চলে দিনভর বিক্ষোভ। বিকেলে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শেষ করে অবস্থানস্থল ত্যাগ করেন। আট মাসের বেতন, চাকরি ফেরত দেওয়া এবং বাংলাদেশ ইপিজেড আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করার দাবিতে চলছি তাঁদের এই অবস্থান। শ্রমিকেরা জানান, সকালে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং বিকেলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়। তাঁরা আরও ২৫ দিন অপেক্ষা করবেন।

এর আগে সকালে শ্রমিকদের এই অবস্থান কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শ্রমিকের বেতন নিয়ে কোনো তাল বাহানা সহ্য করা হবে না। যারা সরকারে আছেন, তাঁদের লজ্জা থাকা উচিত। এই শ্রমিকের ট্যাক্সের টাকায় সরকার চলে। আপনাদের বেতন হয়। কিন্তু এই শ্রমিকেরা কাজ করে আট মাস থেকে বেতন পায় না, আপনারা সেটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন না।’

৮ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন এ-ওয়ান বিডি'র শ্রমিকেরা। আজ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

জোনায়েদ সাকী আরও বলেন, এই কোম্পানির মালিক বিদেশি। তিনি মারা গেছেন। মালিক না থাকলেও আছে, আইন আছে। এই কারখানার ভবিষ্যৎ কি হবে, সেই অনুযায়ী শ্রমিকের বেতন আটকে থাকবে এটা কোনো আইন হতে পারে না। অবিলম্বে এই শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তসলিমা আখতার বলেন, রপ্তানি অঞ্চলে বিদেশি মালিকানাধীন কারখানার শ্রমিকদের জন্য করোনার সময়ে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা ছিল না। তাঁদের জন্য ফান্ড বরাদ্দ থাকলে এই শ্রমিকেরা করোনার মধ্যে উপকৃত হতেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক (ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন) মো. তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ-ওয়ান (বিডি) কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টির সমাধানে বেপজা কর্তৃপক্ষ কাজ চলছে। এর মালিক বিদেশি। মালিক কারখানা চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু, অভিভাবক হিসেবে বেপজা কর্তৃপক্ষের এখানে দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিধি মোতাবেক কারখানাটি অকশনে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কোনো কর্তৃপক্ষই চায় না তার শ্রমিকেরা খারাপ থাকুক। আমরা শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে কাজ করছি।’