৮৯ জন বীরাঙ্গনার নামে ভুল, গেজেটভুক্তির প্রক্রিয়া জটিল

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) গেজেটভুক্ত বীরাঙ্গনার সংখ্যা হালনাগাদ নয়। সরকারি তালিকায় এখন পর্যন্ত মোট বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৪৮ হলেও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ৪০২ জনের নাম। এর মধ্যে ৮৯ জন বীরাঙ্গনারই নামে রয়েছে বানানসহ বিভিন্ন ধরনের ভুল। পিতা বা স্বামীর নামের ক্ষেত্রে বানান ও পদবির ভুল, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে ২০৭ জনের। বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সঙ্গে এমন তথ্যগত ভুল বীরাঙ্গনাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা তৈরি করে।

‘বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। আজ বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এ গবেষণা প্রতিবেদন।

পরিকল্পনাহীনতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগে বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি জটিল হওয়ার বিভিন্ন প্রমাণ উঠে এসেছে এ গবেষণায়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস সময় নিয়ে গবেষণাটি করেছেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের গবেষণা সহযোগী রাবেয়া আক্তার। আজ এই গবেষণাপত্র উপস্থাপন করার সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তবে তুলনামূলক কম আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি অপ্রাপ্তি রয়েছে।’

বীরাঙ্গনাদের চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পুরো প্রক্রিয়ায় নানা ঘাটতির বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে গবেষণায়। এর মধ্যে বীরাঙ্গনাদের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ না থাকা, পরিকল্পনাহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক মনোভাব।

গবেষণায় দেখা গেছে, আইনের শাসনের দুর্বলতার ফলে গেজেটভুক্তির পর ভাতা পেতে তিন থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে। ভুক্তভোগী কোনো কোনো বীরাঙ্গনা আবেদনের ছয় বছর পরও পাননি বীর নিবাসের ঘর। এ প্রসঙ্গে একজন বীরাঙ্গনা গবেষককে জানিয়েছেন, আবেদনের পর কত লম্বা সময় প্রয়োজন হয়েছে, এখন আর মনেও করতে পারেন না। এই সময়ে আশপাশের মানুষ তাঁকে সামাজিকভাবে আরও বেশি হেয় করেছে। এরপর গবেষক এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেজেটভুক্তির জন্য কত সময় লাগবে, এটা নির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই। কারও তিন মাসও লাগতে পারে, কারও তিন বছর। প্রক্রিয়ায় যেই সময় লাগবে, সেটাই।’

গবেষণার আলোকে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বীরাঙ্গনাদের খুঁজে বের করতে নির্দিষ্ট কাঠামো নির্ধারণ, স্থানীয় পর্যায়ে গেজেটভুক্তির আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন ও সার্বিক সহায়তার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া, আবেদনের পর থেকে গেজেটভুক্ত হওয়া ও সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়ার সময়সীমা নির্ধারণ, আবাসন–সুবিধা পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির বিষয়টি বাতিল এবং স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকেন্দ্রিক বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনাদের সম্পৃক্ত করা।