৯ মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষা

আওয়ামী লীগ

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তবে দলের পাঁচটি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার ৯ মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। একইভাবে আওয়ামী লীগের ২৯টি জেলা কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগভিত্তিক ১৭টি সম্পাদকীয় উপকমিটিও এখনো গঠন করা যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর দলের উপকমিটির সদস্যপদ নিয়ে এর আগে নানা বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবার সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, প্রতিটি উপকমিটি ৩৫ সদস্যের মধ্যে রাখা হবে। বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া এবং দলীয় কর্মী ছাড়া কাউকে পদ না দেওয়ার বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয় গত বছরের নভেম্বরে। সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা ছিল। এর মধ্যে শ্রমিক লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া দলীয় প্রধানের কাছে সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই জমা দেয়। আর গত নভেম্বরেই খসড়া কমিটির একটি তালিকা জমা দিয়েছিল কৃষক লীগ। বাকিদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা জমা দিতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ পারলেও যুবলীগ জমা দিতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রস্তাবিত কমিটির নেতাদের সম্পর্কে মাঠপর্যায়ে যাচাই–বাছাই করছেন দলীয় প্রধান। খসড়া কমিটিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হতে পারে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। এমন পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কেউ বহিষ্কার হন, কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারও হন একাধিক নেতা। তাই এবার পদ দেওয়ার বিষয়ে সতর্কভাবে এগোচ্ছেন নেতারা। তাঁরা বলছেন, তিন মেয়াদে দল ক্ষমতায়। পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিতর্ক এড়াতে প্রথম সময় নেওয়া হয়। পরে করোনার কারণে এটা পিছিয়ে যায়।

সহযোগী সংগঠনের মতোই গত নভেম্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। তবে তারাও গত ৯ মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এই দুটি ছাড়া ঢাকার বাইরের আরও ২৭টি জেলায়ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির খসড়া জমা পড়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব কমিটি জমা পড়বে।

যুবলীগের আরও সময় লাগবে

গত বছরের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় যুবলীগের সম্মেলন। বিতর্ক এড়াতে পুরোনো কমিটির কাউকে না দিয়ে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামসকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন কমিটির নেতা হতে দেড় হাজারের বেশি জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা পড়েছে। এখনো যাচাই-বাছাই চলছে।

এ বিষয়ে মাঈনুল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তবে খুব বেশি সময় নেওয়া হবে না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগে বঞ্চিত ঢাবি ছাত্রলীগ

গত বছরের ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি ও আফজালুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দুজনেই আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তাঁরা ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দিয়েছেন গত ফেব্রুয়ারিতে। আগের কমিটির কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। আবার বাদ পড়েছেন কেউ কেউ। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা স্বেচ্ছাসেবক লীগে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। এবার নতুন কমিটিতে এমন অন্তত চারজন নেতা বাদ পড়তে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব। এ ছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফকেও রাখা হয়নি নতুন কমিটিতে।

এ বিষয়ে নির্মল রঞ্জন গুহ প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। তবে যাঁদের আগ্রহ নেই, তাঁদের রাখা হয়নি।

চূড়ান্তের অপেক্ষায় কৃষক লীগের খসড়া

নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বিদেশে শাখা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই গত বছরের ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনে সমীর চন্দ সভাপতি আর উম্মে কুলসুম সাধারণ সম্পাদক হন। তাঁরা দুজনেই আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতা হতে প্রায় ৬৫০ সিভি জমা পড়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে। তাঁদের মধ্যে ১১১ সদস্যের নামের একটি তালিকা দলীয় প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সমীর চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই ঘোষণা হতে পারে।

শ্রমিক লীগের খসড়ায় দুটি পরিবর্তন

গত বছরের ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ফজলুল হককে সভাপতি এবং কে এম আযম খসরুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই দিনে কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পান মোল্লা আবুল কালাম আজাদ। তাঁরা তিনজনেই আগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই ৩৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দেওয়া হয়। যাচাইয়ের পর তা এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে রয়েছে। এতে দুটি নাম পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কে এম আযম খসরু প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি বেশি বড় করার সুযোগ নেই। তাই দ্রুত জমা দেওয়া হয়েছে।

মৎস্যজীবী লীগ

গত বছরের ২৯ নভেম্বর সম্মেলনের দিনই ১১ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। বেঁধে দেওয়া নতুন সময়ের মধ্যেই ১১১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর।

সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে পদপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, তিন বছর মেয়াদি কমিটির ৯ মাস চলে গেছে। এখন দ্রুত কমিটি ঘোষণা হলে ভালো। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সাংগঠনিক তৎপরতাও বাড়বে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, বড় দলে অনেক প্রতিযোগিতা, এক পদে অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকে। আলোচনা করে সবাইকে সন্তুষ্ট রেখে গ্রহণযোগ্য কমিটি দিতে সময় লাগে। এ ছাড়া কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া যখন চলছিল, তখন করোনা পরিস্থিতির জন্য গত ছয় মাস এসব কাজ করা যায়নি। শিগগিরই কমিটি ঘোষণা হয়ে যাবে।