'আপুর মতো হয়তো পড়ালেখাই হবে না'

‘জানি না আমাদের কপালে কী আছে। টাকাপয়সা জোগাড় না হলে আপুর মতো হয়তো পড়ালেখাই হবে না আর। কোনো একটা কাজ খুঁজতে হবে।’

কথাগুলো বলছিল আকলিমা আকতার। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে আকলিমা ও তার বোন রাবেয়া আকতার গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে বাণিজ্য বিভাগ থেকে। তারা দুজনই চট্টগ্রামের বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী।

দুই বোনের মনেই শঙ্কা। তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কি না। কারণ, বড় বোন ইয়াসমীন আকতারকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পরে পড়ালেখা ছাড়তে হয়েছে অভাবের তাড়নায়।

আকলিমারা বেড়ে উঠেছে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তাদের মা। পরে বড় বোন ইয়াসমীন পড়ালেখা ছেড়ে সংসারের হাল ধরেছেন। কাজ নিয়েছেন পোশাকশিল্প কারখানায়।

আকলিমার মা রহিমা বেগম সকালে আয়ার কাজ করেন বাকলিয়া আদর্শ বিদ্যালয়ের ভেতরের কেজি স্কুলে। দুপুর থেকে আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। এরপর আবার আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে ধোয়া-মোছা ও আসবাব পরিষ্কার করেন।

আকলিমারা চার বোন, মা আর নানি থাকেন নগরের চকবাজার এলাকার গণি কলোনির সামনে ছোট দুটি কক্ষে। একটিতে পাশাপাশি দুটি খাট পাতা। ভেতরে রান্নাঘর।

গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায়। জায়গা-জমি না থাকায় মেজো মেয়ে রহিমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন।

আকলিমার বাবা রিকশা চালাতেন। তাদের জন্মের কিছুদিন পরে তিনি বিয়ে করে আলাদা সংসার গড়েন। এর পর থেকে আর কোনো খোঁজখবর রাখেননি তাদের।

আকলিমা ও রাবেয়ার বয়সের ব্যবধান দেড় বছর। আকলিমা অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। ফলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়। এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের তিন বোনের মধ্যে একজনের বেতন মওকুফ করে দেয়। কোনো গৃহশিক্ষক ছিল না দুই বোনের। স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই পড়ত। সকালে আর রাত ১০টার পরে কিছুক্ষণ বাসায় পড়ত বলে জানায় আকলিমা।

আকলিমা পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন দেখে। আর রাবেয়ার স্বপ্ন ব্যাংকে চাকরি করা। বলে, ‘বেশি টাকা আয় করা যাবে, তাই ব্যাংকে চাকরি করতে চাই।