'ওপরের নির্দেশ'-এ মঞ্জুর খুন (প্রথম অংশের পর)

সেনাবাহিনীর চিকিৎসক কর্নেল এ জেড তোফায়েলের ভাষ্য অনুসারে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামস জেনারেল মঞ্জুরের মৃতদেহ শনাক্ত করেন সিএমএইচে। কর্নেল তোফায়েলই মঞ্জুরের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিলেন। তোফায়েল বলেছেন, ‘মেজর জেনারেল মঞ্জুরের ডেডবডি শনাক্তকরণের জন্য আমি যখন জিজ্ঞাসা করি, তখন আমাকে বলা হয়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামস ডিউটি মেডিকেল অফিসারকে কর্নেল কামালের কাছে লাশ হস্তান্তর করে শনাক্ত করে গেছেন।’ নায়েক-২-এর সাক্ষ্য সত্য হলে এই সেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামস, যিনি ফায়ারিং রেঞ্জে মঞ্জুরের নাড়ি পরীক্ষা করে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন, আর তার আগে ক্যাপ্টেন এমদাদের কাছে জেনে নেন, ‘কাজ’টা সারা হয়েছে কি না।
কর্নেল তোফায়েলের সাক্ষ্য আরও একটি দিক থেকে কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, মাথায় একটি গুলি লেগেই জেনারেল মঞ্জুর মারা যান; ‘অনেকগুলো গুলি’ তাঁর শরীরে লাগেনি। ‘ক্ষুব্ধ মানুষ’ বা তাঁর গার্ডদের সঙ্গে এঁদের বন্দুকযুদ্ধের সময় তাঁর শরীরে একাধিক গুলি বিদ্ধ হয়নি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামালউদ্দিন ভূঁইয়া ২০১৩ সালে ঢাকা ট্রিবিউন-এ রং চড়িয়ে যে দাবিটি করেছেন, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামালউদ্দিনের ভাষ্যের সঙ্গে ফরেনসিক প্রতিবেদনেরও কোনো মিল নেই। উপরন্তু ১ জুন ১৯৮১ হাটহাজারী থানা থেকে মঞ্জুরকে সেনানিবাসে নিয়ে আসা সৈনিক ইউনিটের সদস্যদের ভাষ্যের সঙ্গেও তাঁর বক্তব্যের কোনো মিল নেই। তাঁদের কেউই বলেননি যে মঞ্জুরকে ছিনিয়ে নিতে উন্মুখ কোনো ‘ক্ষুব্ধ মানুষের’ সামনে তাঁরা পড়েছিলেন, আর ওঁদের ঠেকাতে তাঁদের গুলি করতে হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য অনুসারে, এক শান্ত সন্ধ্যায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামালউদ্দিন ভূঁইয়া ও তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। সে রাতেই তাঁরা মঞ্জুরকে হত্যা করেন। (চলবে)
(সিআইডিকে দেওয়া জবানবন্দির ভাষ্যে শুধু বানান ও ভাষাগত পরিমার্জনা করা হয়েছে)

লরেন্স লিফশুলৎজ ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ (হংকং)-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ান, লে মঁদ দিপ্লোমাতিক, দ্য নেশন (নিউইয়র্ক) ও বিবিসির পক্ষে লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন; তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ: দি আনফিনিশ্ড্ রেভল্যুশন, হিরোশিমা’জ শ্যাডো ও হোয়াই বসনিয়া?