রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি কমেছে। কিন্তু ভাঙন তীব্র হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় ভাঙছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের পাশে। গত চার দিনে উপজেলার ইছলি এলাকায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইছলি গ্রামের তৃতীয় দফা বন্যার পর নদী ভাঙনকবলিত মানুষের এমন দুর্দশার চিত্র জানা গেল।
ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ইছলি গ্রামে প্রায় ৬৫০ পরিবারের বাস ছিল। দুবছর আগে বন্যা ও নদীভাঙনে এই এলাকার ৫০টি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য স্থানে চলে গেছে। বাকি ৬০০ পরিবার সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু এ বছর কয়েক দফা বন্যার পর নতুন করে এই এলাকা ভাঙছে। নদীর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে এবার এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার থেকে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। নদীভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ভেঙে দূরে সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছে।
বুধবার সকালে ভাঙনকবলিত ইছলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষজনের বাড়িঘরের ওঠা পানি নেমে গেছে। কিন্তু বসতভিটা, আবাদি জমি ভাঙছে। বন্যার পর নদীভাঙনে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গ্রাম ছেড়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন তিস্তা সেতুর উত্তরে কালীগঞ্জ পাকা সড়কের পাশে বসত গড়তে। আবার কেউ অন্য কোনো উঁচু স্থানে ঠাঁই নিচ্ছেন।
দুবার ভাঙনের শিকার হয়ে এবার গ্রাম ছেড়ে বাড়িঘর নিয়ে অন্য স্থানে ঠাঁই নিয়েছেন গৃহবধূ মনিরা বেগম। ভেঙে আনা ঘরের পাশে বসে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর থাকি এলাকাতে (ইছলি) আছনো। তখনো নদীর ভাঙন ছিল। কিন্তু এবার নতুন করি অনেক বেশি ভাঙন শুরু হইছে। তাই আরা থাকপার পারনো না। বাড়িঘর ভাঙি রাস্তার পাশোত চলি আসনো। হামার আর জমি থাকল না।’
কৃষক হাসেম আলী দুটি টিনের ঘর ভেঙে কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে চলে গেছেন। ১০ বছর ধরে তিনি ইছলি এলাকায় বসবাস করলেও নদীর ভাঙন এত তীব্র ছিল না। এবার তাঁর বসতভিটা, আবাদি জমিসহ সব চলে গেল নদীগর্ভে। হাসেম আলী বলেন, ‘অনেক বছর থাকি এই গ্রামোত (ইছলি) আছনো। এবার এই গ্রামের মায়া ছাড়ি চলি যাওয়া লাগিল।’
কৃষক আবদুল মালেকের দুই একর আবাদি জমি, বসতভিটা এই চার দিনের নদীভাঙনে সবই চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘হামার আর কিছু থাকিল না, তাই টিনের ঘর ভাঙি নিয়া আসি পাকা সড়কের পাশোত উঠছি। শেটে যে ঘর তুলমো সেই টাকাও নাই।’
ইছলি গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম, মনির হোসেন, ফারুক হোসেনসহ আরও অনেক পরিবারকে দেখা গেল গ্রাম থেকে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইছলি এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল সামাদ বলেন, ‘এর আগে এই এলাকায় নদীর ভাঙন খুব কম ছিল। বন্যার পানি উঠত বাড়িঘরে। কিন্তু এবার ভাঙন এত তীব্র হয়েছে যে মানুষজন ঘরবাড়ি ভেঙে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার চলে গেছে অন্যত্র।’ তিনি জানান, এমপির পক্ষ থেকে বন্যা ও ভাঙনকবলিত এলাকার ৫০ পরিবারকে এক বস্তা করে চাল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে তালিকা করা হচ্ছে। ভোটার আইডি (নিবন্ধন) কার্ড নেওয়া হচ্ছে। টাকা বরাদ্দ হলে দেওয়া হবে।