'তেলাপোকা-ছারপোকার কাছে সবাই সমান'

কারওয়ান বাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যেতে কানে বাজল তেলাপোকা-ছারপোকা নিধনের ‘মারণাস্ত্র’ এবং মোটামুটি ‘অব্যর্থ’ এক ওষুধের চটকদার বিজ্ঞাপন। শব্দযন্ত্রে ভেসে আসা সেই বিজ্ঞাপনের উৎস খুঁজে পেতেও দেরি হলো না। কাছে গিয়ে দেখা গেল, ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিপরীত পাশে বিশেষভাবে তৈরি ভ্যানের ওপর বসে এই ওষুধ বিক্রি করছেন মোহাম্মদ আরিফ মিয়া। সেখানে তেলাপোকা-ছারপোকার ওষুধের বাইরে মিলছে চুলকানি, দাঁতের ব্যথা, মাথার উকুনসহ কাপড়ের দাগ ‘সমূলে উৎপাটনের’ দাওয়াই। আছে ওরস্যালাইন, হজমির বড়িও। দোকানটি সুন্দর করে সাজানো। মাথার ওপর ফ্যান, দেয়ালে ঘড়ি আর পাশে ছোট একটা সাউন্ডবক্স।

কথা হলো আরিফ মিয়ার সঙ্গে। জানালেন, প্রায় দুই যুগ আগে অভাবের তাড়নায় রংপুর থেকে এই শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। শুরুতে চা ও মুদিদোকান চালানো, ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে নানা ধরনের পেশা বদল। বছর পনেরো আগে বিয়ের পর এই ওষুধ বিক্রির কাজে হাতেখড়ি। তখন থেকে কারওয়ান বাজারের এই একটি জায়গাতেই বেচাবিক্রির কাজ করছেন।

কীভাবে এই পেশায় এলেন জানতে চাইলে আরিফ মিয়া বলেন, ‘আমার শ্বশুর মডার্ন হারবালে চাকরি করতেন। উনিই আমারে এই ব্যবসায় আনছেন। কাম শিখাইছেন।’ আরিফের ভাষ্য, মোটামুটি সব শ্রেণির ক্রেতাই বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁর দোকানে ভিড় করেন। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তেলাপোকা-ছারপোকা মারার ওষুধ ও চুলকানির মলম। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘চুলকানি একবার যার হইছে, তার তো ছাড়ন নাই। আর তেলাপোকা-ছারপোকার কাছে তো সবাই সমান। বাজার করতে আইসা গাড়িতে চড়া অনেক মানুষও ছারপোকা মারার ওষুধ নেন।’

আরিফ জানালেন, তাঁর সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে ছোট দুটি মেয়েও রয়েছে। কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করলেও তাঁর বসবাস মিরপুর ১০ নম্বরে। কারণ প্রতিদিন সকালে সেখানে দুই ঘণ্টার জন্য এক ডাক্তারের সিরিয়াল লেখেন তিনি। তাতে মাসে হাজার কয়েক টাকা বাড়তি আয় হয়। আর দোকানের দৈনিক বিক্রি ১ হাজার টাকার কম না। সব মিলিয়ে তাঁর ‘মোটামুটি’ চলে যায়।

ঢাকায় থিতু হলেও গ্রামের সঙ্গে এখনো যোগযোগ রয়েছে আরিফের। অন্তত বছরের দুই ঈদে সপরিবার বাড়িতে যান। কিছুদিন করে বাবা, ভাইবোনদের সঙ্গে থেকে আসেন। মা মারা গেছেন আগেই।

এই যান্ত্রিক শহরে থেকে পাকাপাকি বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছা করে কি না, জানতে চাইলে আরিফ বলেন, সেই পরিকল্পনা তাঁর নেই। তবে ভবিষ্যতে এই পেশা বদলে গাড়িচালকের কাজ করার ইচ্ছা আছে। গাড়ি চালানোটা ভালোই জানেন। এখন কেবল লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষা।