'পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট ও সময়টা ভালো বুঝতেন বঙ্গবন্ধু'

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনার চেয়ে প্রেক্ষাপট ও সময়জ্ঞান জরুরি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট ও সময়টা ভালোভাবে বুঝতেন। তাই পাকিস্তানের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ছয় দফা প্রচার করেছিলেন। আর ছয় দফার বিষয়বস্তু ’৭০-এর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করে বাংলার গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফার ৫০ বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচনায় রেহমান সোবহান এ মন্তব্য করেন।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আলোচনার শুরুতে বই লেখার প্রেক্ষাপট ও বইটি সম্পর্কে নিজের ভাবনার কথা জানান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, ইতিহাসের শুরু কীভাবে, একটি দেশের জন্ম কীভাবে আর আন্দোলন-সংগ্রামের পর্যায়ের একটা লম্বা ইতিহাস আছে। ইতিহাসের ওই অংশের বর্ণনা বইটিতে আছে। তখনকার নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালি জাতি সঠিকভাবে গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে না। নিজেদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিজেরা নিতে না পারলে তো বাঙালি জাতি ভবিষ্যতে এগোতে পারবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রেহমান সোবহান মনে করেন, বিষয়ের প্রেক্ষাপট ও সময়জ্ঞান বঙ্গবন্ধু খুব ভালোভাবে বুঝতেন। ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক সময়ে তিনি ছয় দফা প্রচার করলেন। ভারতের সঙ্গে ’৬৫-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পরের সময়টাকে তিনি বেছে নিলেন। ওই সময় পাকিস্তানের বিরোধী দল আন্দোলনের জন্য মরিয়া হয়ে তাঁকে পাশে চাইলেও তিনি নিজের লক্ষ্যে অটল থাকলেন। ছয় দফা আসলেই আন্দোলনের জন্য ম্যাগনাকার্টা হয়ে গেল। কারণ ভবিষ্যতে বিরাট রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য খুব স্পষ্ট কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে সামনে এগোতে হয়। ছয় দফা পরে ’৭০-এর নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে ছয় দফা এক মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলের বৈঠকে বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। তাঁর ছয় দফা ছিল কৌশলমূলক প্রস্তাবনা। আর এটি বুঝতে হলে বঙ্গবন্ধুর কর্মকৌশল বুঝতে হবে।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি। বইটি থেকে ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা হবে। সামনে চলার জন্য ইতিহাস থেকে আমরা পাঠ নেব।’
শামসুজ্জামান খান জানান, খুব শিগগিরই বাংলা একাডেমিতে থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বই ‘কারাগারের রোজনামচা’।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান আরও বক্তৃতা করেন বাংলাপিডিয়ার প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ।