'বোতল বেগুনে' লাভবান চাষি

শেরপুরের সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে ‘বোতল বেগুন’ উৎপাদন হচ্ছে। এই বেগুনের চাহিদা অনেক। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ বেগুন। বোতল বেগুন চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুনের আবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। মূলত সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের পয়স্তীরচর, শাহাব্দীরচর, গোয়ালপাড়া, ৬ নম্বর চর ও ৭ নম্বর চর এবং লছমনপুর ইউনিয়নের লছমনপুর, কুসুমহাটি, নামাশেরীরচর ও দীঘলদী এলাকায় বোতল বেগুনের আবাদ বেশি হয়।
বোতল বেগুনের রং তামাটে। আকৃতি লম্বা। দেখতে অনেকটা বোতলের মতো। তাই কৃষকেরা এ বেগুনের নাম দিয়েছেন ‘বোতল বেগুন’। একটি বোতল বেগুনের ওজন সর্বনিম্ন আড়াই শ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বেগুন উৎপন্ন হয়। প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ২ মণ বেগুন উৎপন্ন হয়। এ বেগুন খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। ভাজা-পোড়া থেকে শুরু করে ঝোল-তরকারি সব রান্নাতেই এটি ব্যবহার করা যায়।
গত সোমবার সদর উপজেলার প্রসিদ্ধ কামারেরচর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক কৃষক বড় বড় খাঁচা ও ডোলে করে বোতল বেগুন এনেছেন বিক্রির জন্য। এটি পাইকারি বাজার। বাজারে ট্রাক, পিকআপ, সুজনসহ ১৫ থেকে ২০টি যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে সবজি পরিবহনের জন্য। এখান থেকে পাইকারেরা বেগুনসহ অন্য সবজি পাইকারি দামে কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করেন।
কথা হয় কয়েকজন কৃষক ও পাইকারের সঙ্গে। সদর উপজেলার ৬ নম্বর চর গ্রামের কৃষক সাহেব আলী বলেন, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে বোতল বেগুন আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৬০-৬৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ১৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাঁর ভালো লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
৬ নম্বর চর গ্রামের কৃষক মো. আসাদ আলী ২৮ শতাংশ জমিতে বোতল বেগুন আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ১৭-১৮ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০-২৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরও ১৫-২০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘কুয়াশা ও তীব্র শীত না থাকলে বেগুনের ফলন ভালো হইবো এবং আমরাও বেশি লাভ করতে পারমু।’
টানকাছার গ্রামের মো. আছর উদ্দিন ৫৫ শতাংশ জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরও ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
ডোবারচর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম জানান, তিনি ৭৫ শতাংশ জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ৭৫ হাজার টাকার। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছেন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এখন বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। তিনিও লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
কামারেরচর বাজারের পাইকারি বেগুন ব্যবসায়ী মো. আবদুল মোতালেব জানান, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কামারেরচরে উৎপাদিত বোতল বেগুনের অনেক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে তারা প্রতি মণ বেগুন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে কিনছেন। আর পাইকারি বিক্রি করছেন গড়ে ৬০০ টাকায়। এতে তাঁর কমবেশি লাভ হয়। প্রতিদিনই ১৫-২০টি ট্রাকে করে বেগুন বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা বলেন, শেরপুরের বোতল বেগুনের ব্যাপক চাহিদা। উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকেরা বর্ষা মৌসুমের পরপরই এ বেগুন আবাদ করেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বেগুন উৎপন্ন হয়। ফলে আর্থিকভাবে তাঁরা লাভবান হয়ে থাকেন। দিন দিন এই বেগুনের আবাদ বাড়ছে বলে জানান তিনি।