'মা' উপন্যাস বাংলাদেশের মর্মবাণী ধরে রেখেছে

আনিসুল হকের মা উপন্যাস প্রকাশের ১৪তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে লেখক আনিসুল হককে তাঁর প্রতিকৃতি উপহার দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবিতে (বাঁ থেকে) জুয়েল আইচ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও ফরিদ আহমেদ l ছবি: প্রথম আলো
আনিসুল হকের মা উপন্যাস প্রকাশের ১৪তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে লেখক আনিসুল হককে তাঁর প্রতিকৃতি উপহার দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবিতে (বাঁ থেকে) জুয়েল আইচ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও ফরিদ আহমেদ l ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মা একটি জরুরি সৃষ্টিশীল উপন্যাস। এই বইটি বাংলাদেশের মর্মবাণীকে ধরে রেখেছে। কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের মা উপন্যাস প্রকাশনার ১৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আজাদের মা আমাদের মা’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। ২০০২ সালে প্রথম আলো ঈদসংখ্যায় প্রথমবারের মতো উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। পরের বছর সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই উপন্যাসের সংস্করণ এর মধ্যেই ৬৯ ছাড়িয়েছে। বাংলার পাশাপাশি ওডিশা, স্প্যানিশ ও ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে এই উপন্যাস। কলকাতায় প্রকাশিত হয়েছে আলাদা সংস্করণ। এখন সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যতখানি জানা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি জানা সম্ভব সৃষ্টিশীল রচনার মধ্য দিয়ে। লাখ লাখ পাঠক এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাস দেখেছে, মানবিক সংকটের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসলে কী ঘটেছিল, তা পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বইটির উর্দু সংস্করণ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন এই অধ্যাপক।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বইটির ৬৯টি সংস্করণ বের হয়ে গেছে। তার মানে জাতি এটাকে গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক নাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আনিসুল হক যদি এই উপন্যাসটি না লিখতেন, তাহলে আমরা আজাদের মাকে জানতাম না। হাজার মানুষের মায়ের প্রতীক হয়ে ওঠা এমন একজন মা আমাদের প্রয়োজন ছিল।’
অনুষ্ঠানে ঔপন্যাসিক আনিসুল হককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অতিথিরা লেখককে তাঁর একটি প্রতিকৃতি উপহার দেন। এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এবং সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ।
আনিসুল হক তাঁর উপন্যাস সম্পর্কে বলেন, ‘এই কাহিনিতে আজাদ তাঁর বুকের রক্ত দিয়ে লিখেছে। আজাদের মা তাঁর অশ্রু দিয়ে লিখেছেন। যা তাঁর নিজস্ব সংগ্রাম।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মা উপন্যাস থেকে অংশবিশেষ পাঠ করা হয়। এরপরই দেখানো হয় ‘শহীদ আজাদের মা’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র। সবশেষে গান পরিবেশন করে গানের দল চিরকুট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আব্দুন নূর তুষার।