'সুরমা লাগা রে আতর লাগা রে'
‘রোজা রেখেছি, দোয়া করেছি; আল্লাহর দরবারে...সুরমা লাগা রে, আতর লাগা রে। আকাশে খুশির চাঁদ উঠেছে। ঈদ ঈদ ঈদ এসেছে।’ বগুড়া শহরের সর্বত্রই এখন ঈদের এমন গানের সুর ভেসে আসছে। আর ঈদ প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে শহরের দোকানগুলোতে জমে উঠেছে আতর, সুরমা, টুপি, জায়নামাজ আর তসবির বিকিকিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়া নিউমার্কেটের বড় মসজিদ লেন, বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদসহ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে সেখানে আতর, সুরমা, টুপি ও জায়নামাজের বিকিকিনি জমজমাট হয়ে উঠেছে।
বড় মসজিদ লেনের নুরুল্লাহ টুপি ঘরের বিক্রেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, তাঁর দোকানে দুবাইয়ের আল জিহাদ, আল হারামাইন, ভারতের আল নাঈম ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের আতর রয়েছে। ফেরদৌস, কিসওয়াতুল কাবা, দিলরুবা, আম্বর কস্তুরি, জেসমিন—এমন হরেক পদের আতরের ৬ ও ২৫ মিলিলিটারের শিশির দাম পড়বে ৯০ থেকে ৩৫০ টাকা।
বড় মসজিদ লেনের দোকানগুলোতে পাকিস্তান ও ভারতীয় সুরমার পাশাপাশি মিলবে দেশি সুরমা। পাকিস্তানি হাশেমি সুরমার দাম ১০০ টাকা, লতিফ সুরমা ৫০ টাকা, ভারতীয় খোজাতি সুরমা ৫০ টাকা, মোমিরা ৫০ টাকা। আর সুরমাদানিসহ পরিমাণমতো দেশি সুরমা ৫০ থেকে ১৫০ টাকায় মিলবে এখানে। সেখানকার দোকানগুলোতে দেশি টুপি ৩০ থেকে ১৫০ এবং দুবাই, তুরস্ক, পাকিস্তান, সৌদি আরবের জায়নামাজ ৮০ থেকে ২৫০ টাকা, ক্রিস্টাল তসবি ৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বড় মসজিদ লেনের একটি দোকানে আতর, সুরমা, টুপি ও জায়নামাজ কিনতে এসেছিলেন শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার ওয়াজিউল্লাহ তরফদার। তিনি বলেন, ‘ঈদে ছেলেরা নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে। আমি শুধু নিজের জন্য আতর, সুরমা, টুপি, তসবি আর একটা জায়নামাজ কিনলাম।’
ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, দেশের মুসলমান সম্প্রদায়দের মধ্যে ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে নতুন পাঞ্জাবি-টুপির সঙ্গে আতর মাখা ও চোখে সুরমা লাগানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ঈদুল ফিতর যত ঘনিয়ে আসছে, আতর-সুরমার দোকানগুলোতে ভিড় ততই বাড়ছে। জমজমাট এই বেচাকেনা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে আতরে পসরা সাজিয়ে বসা দোকানি মোকাররম হোসেন বলেন, ঈদে দেশি আতরের চাহিদা বেশি। বেলি, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, জুঁইসহ নানা ফুলের সুগন্ধের আতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে দুবাই, ভারত, সৌদি আরব, ফ্রান্সের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতরেরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
টুপির দোকানে ভিড়
ঈদের নামাজে রংবেরঙের টুপি পরতে পছন্দ করে শিশু-কিশোরেরা। এ কারণে ঈদের সময় রঙিন টুপির কদর বেড়ে যায়। বড় মসজিদ লেন এবং বায়তুর রহমান মসজিদের সামনে দোকানগুলোতেও থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাহারি সব টুপি। কাশ্মীরি পাথর বসানো নকশা করা টুপি, জর্দানি টুপি, জিন্নাহ টুপি, নেপালি টুপি, চায়নারুমী টুপি এবং সাদা কাপড়ে রঙিন সুতার নকশা করা টুপি মিলছে ৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। দোকানগুলোতে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে।