'স্বামীর সঙ্গে আমাকেও মেরে ফেললে ভালো হতো'

গত শুক্রবার বেলা ১১টা। ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে আনমনে কী যেন ভাবছিলেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত আলমগীরের (৩৫) স্ত্রী জাহানারা বেগম (২৮)। স্বামীর প্রসঙ্গ তুলতেই শুরু হলো তাঁর আহাজারি। বললেন, ‘ওরা স্বামীর সঙ্গে আমাকেও কেন মেরে ফেলল না। এখন আমি অবুঝ ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব, এদের কী খাওয়াব?’

আলমগীরের মা ছকিনা খাতুনেরও (৫৬) প্রশ্ন ছিল, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, আল্লাহ তাদেরও এভাবে কেন মারে না?’

মৃত্যুর চার দিন পরও কান্না থামেনি আলমগীরের পরিবারে। স্বামীর শোকে স্ত্রী এবং ছেলের শোকে মায়ের থেমে থেমে আহাজারি এলাকার পরিবেশটাই ভারী করে তুলছে।

আলমগীর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলামের ছেলে। আশপাশের পাহাড়ি এলাকার সামান্য কিছু জমিতে ফসল ফলিয়ে এবং দিনমজুরি করে তিনি সংসার চালাতেন। অনেক দিন থেকে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী দুই শিশু সন্তান রিশমা (৭) ও সিফাতকে (৫) নিয়ে অসহায় হয়ে গেলেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আলমগীর জামায়াত-শিবিরের ভয়ে ছয়-সাত মাস আগে থেকে এলাকা ছেড়ে সাতকানিয়া সদরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় আসেন। রাত আটটার দিকে তিনি তাঁর বাবা ও আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে চূড়ামণি এলাকার পাহাড়ের দিকে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এ সময়ে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা আলমগীরকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের কাজীর মসজিদের দক্ষিণ পাশের চূড়ামণি এলাকার জমিতে ২২ জানুয়ারি সকালে স্থানীয় লোকজন আলমগীরের লাশ দেখতে পায়। তাঁর শরীরে ছুরির আঘাত ও গুলির চিহ্ন ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ধারণা করা হচ্ছে, আলমগীরকে সন্ত্রাসীরা ২১ জানুয়ারি রাতের কোনো এক সময় অন্য জায়গায় হত্যা করে। পরে তাঁর লাশ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি জমিতে এনে ফেলে রাখে।

আলমগীরের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে যুবলীগের কর্মী ছিল। জামায়াত-শিবিরের ভয়ে সে অনেক দিন আগেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সে এলাকায় এসে বিকেলেই চলে যায়। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা তাকে অন্য কোথাও থেকে ধরে এনে চূড়ামণি এলাকায় হত্যা করেছে। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন আমরা ভোট দিতে গেলে তারা (জামায়াত-শিবির) আমার ঘরেও লুটপাট চালায়। ওরা আমাকেও হত্যা করতে পারে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আলমগীর আমাদের দলের সক্রীয় কর্মী ছিলেন। তাঁকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’

এ ব্যাপারে আলমগীরের বাবা গত বুধবার রাতে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মী। বিষয়টি স্বীকার করে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন বলেন, হত্যাকারী যে-ই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।