বিজ্ঞানে ভয় কীসে!

শিক্ষার্থীরা হাজির হয়েছিল তাদের তৈরি নানা প্রকল্প নিয়ে। ছবি: দীপু মালাকার
শিক্ষার্থীরা হাজির হয়েছিল তাদের তৈরি নানা প্রকল্প নিয়ে। ছবি: দীপু মালাকার

এক বনাম দশ। একাই দশজনের বিপরীতে দাবা খেলতে নেমেছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন, সে এক দেখার মতো দৃশ্য বটে! এমন অনেক চমকপ্রদ ঘটনা চোখে পড়ল ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছিল ‘বিজ্ঞানচিন্তা-বিকাশ বিজ্ঞান উৎসব ২০১৯’–এর জাতীয় পর্ব।

১৯ এপ্রিল থেকে ঢাকা আঞ্চলিক পর্বের আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। এরপর একে একে চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট আর রাজশাহীতে আয়োজিত হয় আঞ্চলিক পর্বগুলো। প্রতিটি আঞ্চলিক পর্বে ছিল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান প্রকল্প উপস্থাপন প্রতিযোগিতা। জুনিয়র (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) ও সেকেন্ডারি (নবম থেকে দশম শ্রেণি)—এই দুই ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায়। যৌথভাবে আয়োজন করেছে বিকাশ ও বিজ্ঞানভিত্তিক মাসিক পত্রিকা বিজ্ঞানচিন্তা, সার্বিক সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো বন্ধুসভা। এবারের উৎসবের স্লোগান, ‘বিজ্ঞানে বিকাশ’।

মাঠে রোভার আর আকাশে রকেট

সকাল থেকেই উৎসব প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বানানো রোবট ‘মঙ্গলতরী’ ও ‘রেসকিউবট’। মঙ্গলের মাটিতে অভিযান চালাতে অভিনব এই রোবট বানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা, যা আন্তর্জাতিক আয়োজনে বাংলাদেশকে তুলে ধরে। অন্যদিকে ছিল রেসকিউবট। বিপদে মানুষকে সাহায্য করাই এই রোবটের কাজ। বাস্কেটবল মাঠে যখন এই রোবট দুটি নিয়ে মেতে আছে সবাই, তখন পাশের মাঠেই আয়োজন করা হয় ওয়াটার রকেট উৎক্ষেপণের। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সদস্য মনন মাহমুদ ও তাঁর দল মিলে এই রকেট উৎক্ষেপণের আয়োজন করে। বিশেষ পদ্ধতিতে পানি আর বাতাসকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে এই ওয়াটার রকেট। সেই রকেটে চড়ে বসার উপায় নেই, তবে বিজ্ঞান শেখা ও চর্চা করার সুযোগ তো আছেই!

মজার যত প্রকল্প

বিজ্ঞান প্রকল্পের কিছু কিছু স্টলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এগুলোর মধ্যে একটি হলো রোবট কুইন। ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে আসা দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সৈয়দ নাবিদ হোসেন ও মোফাসসাল হাসান বানিয়েছে এটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট ‘সোফিয়া’–এর আদলে তারা এটি তৈরি করেছে। নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপণসহ নানা রকম আধুনিক ফিচার এতে যুক্ত আছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসেছে ফাহিম ফয়সাল ইসলাম ও মিসবাহ উদ্দীন। তারা নিয়ে এসেছে ফুটস্টেপ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির উপায়—বিশেষ একটি যন্ত্র পায়ে পরে হাঁটলেই বিদ্যুৎ তৈরি হয়। পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পে এখন অল্প বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলেও ভবিষ্যতে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে ওদের।

বিজয়ীর মুকুট পরল যারা

বিজ্ঞান যে কঠিন কিছু নয়, সেটিই প্রমাণের প্রচেষ্টা ছিল বিজ্ঞান উৎসবের মঞ্চে। এত সব আয়োজনের মূলেই ছিল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। সেরাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। প্রকল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবুর রহমান। তার প্রকল্প ছিল ইলেকট্রনিক বক্স। বাসার সাধারণ সব ইলেকট্রনিক সমাধানকে সে সাজিয়েছে তার ছোট্ট বাক্সে। সেরাদের কাতারে আসায় তার অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলল, ‘পুরস্কারের জন্য আসলে এটা করিনি। বিজ্ঞান ভালোবাসি, তাই করেছিলাম। কিন্তু সেটাই আমাকে সেরা করবে ভাবতে পারিনি। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।’ অন্যদিকে দ্বিতীয় হয়েছে বরিশাল জিলা স্কুলের আহাদুল ইসলাম, সামিন আহমেদ ও নাসিফ মাহমুদ। ওরা বানিয়েছে বিশেষ হোমোনয়েড। বাসার নিরাপত্তা, মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়, জরুরি গ্যাস শনাক্তকরণসহ আরও নানা ফিচার আছে তাদের এই হোমোনয়েডে। প্রকল্পে তৃতীয় হয়েছে বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সৈয়দ সাদ বিন হায়াত, মো. মাস্ফি জুনায়েত ও সুলতানা সারওয়াতরা। ওরা কাজ করছে বাক্‌প্রতিবন্ধী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি নিয়ে।

বিজ্ঞান প্রকল্প ও কুইজ বিজয়ীদের সেরাদের সেরারা পেয়েছে ক্রেস্ট, সনদ, বই আর ল্যাপটপ। সারা দিনের উৎসবে বিনা মূল্যে আইসক্রিম দিয়েছে লাভেলো।