মধুর স্মৃতি

কোথাও কেউ নেই থেকে ঘেটুপুত্র কমলা—সময়ের হিসাবে অনেক দিন। এ দীর্ঘ সময় হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে আসছি। এ সময়ে তাঁকে যতটা চিনেছি, তিনি গান অন্তপ্রাণ মানুষ। খেয়ালি, আড্ডাবাজ, সংবেদনশীল। তাঁর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। আমার প্রতি তাঁর আস্থা এমন ছিল যে রেকর্ডিংয়ের আগে আমার সুরে তাঁর লেখা কোনো গানের সুর শোনারও প্রয়োজনবোধ করতেন না। ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’, ‘আইজ আমরার কুসুম রানির বিবাহ হইব’, ‘ও গো ভাবীজান, নাও বাওয়া মদ্দলোকের কাম’—এমন আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার তিনি। তাঁর গানে মৃত্যুচিন্তা, প্রকৃতি, চন্দ্রালোকিত রাত ও জ্যোৎস্নার এত প্রবল আলোড়ন আছে, গানগুলো যেন মুহূর্তেই আমাদের নতুন ভাব ও ভাবনার মরমি-জগতে নিয়ে যায়। তিনি যে কেবল আমাদের দেশের জনপ্রিয় লেখক তা-ই নয়, জনপ্রিয় গীতিকার হওয়ার পাশাপাশি অনেক কণ্ঠশিল্পীকেও জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি।১৯৯৮ সাল। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে বললেন, ‘মিন্টু ভাই, জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এবার আমি আপনাকে নুহাশ চলচ্চিত্র পদক দিতে চাই।’ তাঁর কথা শুনে ততক্ষণে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট। কারণ, তখনো আমি কোনো পুরস্কার পাইনি। শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা এরও অনেক পরে। তিনি বিষয়টি জানতেন না। জানার পর বিস্ময় নিয়ে বললেন, ‘এত ভালো কাজ করার পরও আপনি কোনো পুরস্কার পাননি!’তাঁর নুহাশ চলচ্চিত্র পদকই আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার—আজ এটা ভেবে গর্ব অনুভব করি। অনেক বড় অনুষ্ঠান করে আমাকে সম্মানিত করেছিলেন তিনি। পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। এ সময় হুমায়ূন স্যার বললেন, ‘এক জাদুকর আরেক সুরের জাদুকরকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছে—এটা দারুণ এক মুহূর্ত।’ মকসুদ জামিল: সংগীত পরিচালক