পরিণতি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মুখ গোমড়া করে বসে ছিল মুনা। হাসানকে যেন দেখেও দেখছিল না। হাসানের একটু খটকা লাগে। আবার কী হলো? হাত থেকে তার অফিসের ব্যাগটাও নিল না।
কী হয়েছে? কী আর হবে। সাপের মতো ফুঁসে উঠল মুনা। তোমার মাকে বিদায় করো। নাহলে আমি চললাম। হাসানের কাছে এটা নতুন নয়। প্রায়ই মুনা মাকে বিদায় করতে বলে। সংসারের টুকটাক অনেক কাজই তো মা করে। বসে বসে তো খায় না, বলল হাসান। যত যা-ই বলো, ওই মহিলা এখানে থাকলে আমি থাকব না।
দ্রুত ঝগড়ার ব্যাপ্তি বাড়ছিল। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলেই হয়। মুনার কথায় হাসান চমকে ওঠে। তারপরও শেষ অবধি মুনার জয় হয়। তার কথাই মেনে নেয় হাসান। হাসান বলল, মাকে কীভাবে বলব? কিছু বলতে হবে না। ওখানে রেখে এলেই সব বুঝে যাবেন। বলল মুনা। আড়ালে দাঁড়িয়ে হাসান-মুনার সব কথাই শুনছিলেন রহিমা বেগম। ছোটকালে হাসানের বাবা মারা যান। অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেছেন। অফিসে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়েছেন। একটুখানি জমি ছিল, তাও বিক্রি করেছেন। নিজের টুকটাক গয়না, তাও বিক্রি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। এসবই তো ছেলের জন্য করেছেন। ছেলে বড় হয়েছে। তার বাড়ি, গাড়ি কত কিছু। রহিমা বেগমের হিসাব আর মেলে না। তিনি কি এই ছেলেকেই পেটে ধরেছিলেন?
মা ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে নাও। হাসান বলল। রহিমা বেগম হাসানের হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবা, দরকার হলে একবেলা খাব। তোর বাসায় সব কাজ করব। তবুও আমাকে অন্য কোথাও রেখে আসিস না। বললেন রহিমা বেগম। হাসান অনড়। এবার হাসানের পা জড়িয়ে ধরলেন তিনি। এই সব ন্যাকামো ছাড়ো, ওখানে ভালো থাকবে, বলল হাসান। হাসানের ছেলেমেয়েরা কান্না করছিল। দাদিকে তারা কোথাও যেতে দেবে না। দুটো চড় মেরে ছেলেদের চুপ রাখল হাসান।
অনেক দিন পর। হাসান তখন বৃদ্ধ। ঠিকমতো চোখে দেখে না। একা চলাফেরা করা মুশকিল। হাসানের বউ অনেক আগেই তাকে রেখে চলে গেছে। একা বড় নিঃসঙ্গ সে। বউয়ের প্রবল আপত্তি। এই বৃদ্ধ একটা উটকো ঝামেলা। একে ঘরে রাখা যাবে না, হাসানের ছেলের বউ বলল। হাসানকে তার ছেলে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। সেও ছেলেকে ছেড়ে যেতে চায়নি। তবুও তাকে যেতে হলো।

মায়ের কথা খুব মনে পড়ে হাসানের। এভাবেই জন্মদাত্রী মাকে সে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছিল। আজ তাকেও সেখানেই আসতে হলো। সে কখনোই ভাবেনি এমন পরিণতি তার হবে। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। আবছা আবছাভাবে মায়ের মুখটা দেখতে পায় হাসান। মুখের কোণে তার লেগে আছে একটুখানি হাসি। ছুরির মতো ধারালো সে হাসি।