অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে গতি এনেছিলেন তিনি

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত
ফাইল ছবি

সদ্য প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আমার অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি বয়সে আমার বড় ছিলেন। তাই তাঁর স্নেহ সব সময় পেয়েছি। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। আমি ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিই। ফলে তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাকে তিনি বিশেষ স্নেহ করতেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড ১২টি বাজেট দিয়েছেন। বাংলাদেশের আর কোনো অর্থমন্ত্রী এতগুলো বাজেট দিতে পারেননি। তবে সব বাজেট নিয়ে কিছু সমালোচনা হয়। তিনিও এর ঊর্ধ্বে ছিলেন না।

তিনটি বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনেক অবদান। তিনটি বিষয় হলো: প্রবৃদ্ধিতে গতি আনা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানব উন্নয়ন। এই তিন খাতের জন্য তিনি নানা নীতি গ্রহণ করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তিনি অবশ্য পরিণত বয়সে মারা গেছেন। তবু দেশের মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম

তাঁর সঙ্গে আমার অনেক মধুর স্মৃতি আছে। যেমন ১৯৮২ সালে তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বিশ্বব্যাংক একটি প্রকল্প নিয়ে আসে। প্রকল্পের বিষয়বস্তু হলো বাণিজ্য-সহায়ক নীতি। বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী কী ঘাটতি আছে, কী করতে হবে—এসব নিয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। আমার পিএইচডির বিষয়বস্তু ছিল বাণিজ্য-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। মূলত বিশ্বব্যাংক আমার পিএইচডির ব্যবহারিক দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটির প্রস্তাব দিয়েছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত যখন শুনলেন, আমার পিএইচডির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রকল্পটি আনা হয়েছে, তখন তিনি আমাকে ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বানানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। আমার প্রতি তাঁর অগাধ স্নেহ থেকেই তিনি এটা করেছিলেন। কিন্তু আমি সেখানে যোগ দিতে পারি না। কারণ, একই সময়ে এসকেপ-এর চাকরির প্রস্তাব পাই। আমি এসকেপের ব্যাংকক কার্যালয়ে যোগ দিই।

আমি যখন অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছি, তখন শিল্পঋণ সংস্থা ও শিল্প ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিই। আমার এই উদ্যোগের খুব প্রশংসা করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তিনি সবার সামনেই বলতেন, আমি এটি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। তুমি করলে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা