অর্থ বিল ২০১৪ পাস
প্রস্তাবিত বাজেটে সাতটিসহ কিছু ক্ষেত্রে রাজস্ব পরিবর্তন ও সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে আজ শনিবার অর্থ বিল ২০১৪ পাস হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনে সারচার্জ আরোপ, কিডনি ডায়ালাইসিসের ওপর মূসক অব্যাহতিসহ সাতটি ক্ষেত্রে শুল্ক, কর, সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব সুপারিশ তাঁর জন্য নির্দেশনা বলে উল্লেখ করে গ্রহণ করেছেন।
এই সাতটিসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন আনা হয়।
এর আগে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মোবাইল ফোনে সারচার্জ আরোপ করে তা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে সংসদকে জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে তা করা হবে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোনের ওপর কীভাবে কতটা সারচার্জ আরোপ করবেন, তা স্পষ্ট করেননি বক্তব্যে।
পাস হওয়া অর্থ বিলে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত আয় বা গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আবাসনশিল্পে মন্দা বিবেচনায় কিছু উেস কর কমানো, ডিটারজেন্ট, ব্লেডসহ আরও কিছু পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বাজেটীয় প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পাইপ লাইনে গ্যাসের ব্যবহার নিরুত্সাহিত করতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের ওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করেছিলেন।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন এই কর ব্যবস্থা বহাল হবে। আগামীকাল রোববার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আজ বাজেটের ওপর আলোচনা করেন।
অর্থ বিল পাসের আগে দুজন সাংসদ জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়।
স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোতে। ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা রয়েছে, তা জানার ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
রুস্তম আলী বলেন, আরও যেখানে যা অর্থ পাচার হয়েছে, সেগুলো দেশে ফেরত আনতে হবে। তিনি এসব আলোচনা এনে অর্থ বিল পাসের আগে তা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন।
জাতীয় পার্টির সাংসদ নুরুল ইসলাম মিলন তাঁর আলোচনায় বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর যে অবস্থা তাতে এ বরাদ্দ দেওয়া ঠিক হবে না। আবার স্বাস্থ্য খাতে যে অবস্থা চিকিত্সক থাকেন না। শিক্ষা, পরিবেশ ও পানি ব্যবস্থার যে অবস্থা তাতে মানুষ ভালো নেই। সাধারণ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছেন না। তিনিও অর্থ বিল পাসের আগে তা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রী এসব বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এই বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এমনকি তিনি গ্রাম পর্যন্ত এই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখন গ্রামের মানুষ পর্যন্ত বাজেট নিয়ে আলোচনা করে। তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবের পর এ নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে কিছু ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নানা ধরনের সমালোচনা করেছেন, সেগুলো তাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের একবার বাহাসও হয়েছে। বারকাত বলেছিলেন, অর্থায়নের ৮৫ শতাংশ বিদেশিরা নিয়ে যান। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। তার কাছে কোনো সমীক্ষাও নেই।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এর পরিমাণ কোনো মতেই ৩০ শতাংশের বেশি না। তিনি দুজন সাংসদকে তাঁদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করেন।