আগে থেকেই সতর্ক থাকা দরকার ছিল

সালেহউদ্দিন আহমেদ

ডলারের মূল্য সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে আগে থেকেই সতর্ক থাকা দরকার ছিল। এখনকার সময় এ নিয়ে নিজেদের গবেষণা না থাকলে জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, এটাই স্বাভাবিক। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স আহরণে প্রণোদনা দেওয়ার মতো অস্থায়ী পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদা, সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি এবং আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত দেশগুলোর মুদ্রামান যাচাই করে এখন সময় এসেছে টাকার যৌক্তিক মান পর্যালোচনা করার। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও বিনিময়ের হার আমাদের জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক। এর ফলে পুরো অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে।

যে সংকট শুরু হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যেও তা পড়ে না। এখন ডলারের দাম নিয়মিতভাবে পর্যালোচনার পাশাপাশি সংকট কাটাতে আমদানিতে লাগাম টানতে হবে। কী আমদানি হচ্ছে, তা তদারকি করতে হবে। প্রয়োজনে কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সক্রিয় হতে হবে।

আর রপ্তানি আয় যারা ধরে রেখেছে বা দেশে আনেনি, তা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারি অন্য সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কারা খোলাবাজার থেকে এত ডলার কিনল, তার তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান জোরদার করতে হবে। বাজারে একটা বার্তা দিতে হবে, এভাবে বিদেশি মুদ্রা কেনা যায় না।

অর্থ পাচার ঠেকাতে নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাংকঋণ কোথায় ব্যবহৃত হলো, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। নানামুখী পদক্ষেপই পারে এই সংকটকে দুর্বল করতে বা কাটিয়ে উঠতে।

আরও পড়ুন

ইদানীং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পণ্য, যেমন সেবা, যাতায়াত—এগুলোর ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে দেশেও দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে হারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে, সে হারের চেয়ে দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বেশি। দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহের প্রক্রিয়ায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মধ্যে কিছুটা যোগসাজশ থাকতে পারে। তা ছাড়া ঘাটে ঘাটে চাঁদা, মধ্যস্বত্বভোগী লোকদের কমিশন আদায়, পরিবহনের ভাড়া ইত্যাদিও কারণ।

সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারির দুর্বলতা ছিল এবং সময়মতো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। শুধু পর্যবেক্ষণ করা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনাই যথেষ্ট নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিদর্শন—এগুলোও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। পণ্যের চাহিদা, সরবরাহ, মজুত, আমদানি এবং সরকারের ভান্ডারে কী পণ্য কতটুকু মজুত, এগুলোর প্রতি সব সময় নজর রাখতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক