আগে যা ছিল জুস তা এখন ড্রিংকস

আগে যা ছিল জুস তা এখন ড্রিংকস
আগে যা ছিল জুস তা এখন ড্রিংকস

বছর খানেক আগেও শহর কিংবা গ্রাম—সব জায়গার দোকানেই হরদম বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত আমের জুস বিক্রি হতো। অসহ্য গরমে আম আছে মনে করে সবাই নিশ্চিন্ত মনে সেসব জুস খেতেন।
কিন্তু দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই বলছে, জুস ও ড্রিংকসের নতুন মান নির্ধারণ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানও আমের জুস উৎপাদন কিংবা বাজারজাত করার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি। এর মানে হলো, বাজারে এখন আর বিএসটিআই অনুমোদিত কোনো আমের জুস নেই। আগে যেসব প্রতিষ্ঠানের ‘আমের জুস’ বিক্রি হতো, সেগুলো এখন হয়ে গেছে ‘আমের ড্রিংকস’। বলা যায়, ফলের রস নয়, এখন পাওয়া যাচ্ছে ফলের পানীয়।
বিএসটিআই বলছে, নতুন মান নির্ধারণ করার পর শুধু একটি কোম্পানি বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে জুস তৈরি ও বাজারজাত করার লাইসেন্স নিয়েছে। সেটিও একটি আনারসের জুস।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম—সার্টিফিকেশন মার্কস) কমল প্রসাদ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন মান নির্ধারণের পর নতুন করে এখন আর কেউ আমের জুসের লাইসেন্স নিচ্ছে না। আগে যারা জুস তৈরি করত, তারাও এখন ড্রিংকসে চলে গেছে। এখন বাজারে বিএসটিআই অনুমোদিত আমের জুস বলতে কিছু নেই। তবে এই সময়ে একটি কোম্পানি আনারসের জুস তৈরির লাইসেন্স নিয়েছে।’
অবশ্য বাজারে বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া কিছু জুস বিক্রি হচ্ছে।
বিএসটিআই নির্ধারিত নতুন মান অনুযায়ী, ফলের জুস বা রসে ওই ফলের অন্তত ৮৮ শতাংশ প্রাকৃতিক উপাদান (ফ্রুট পাল্প) থাকতে হবে। আর ফলের ড্রিংকসে বা পানীয়তে প্রাকৃতিক উপাদান থাকতে হবে অন্তত ১০ শতাংশ। আগের মান অনুযায়ী, ফলের জুসে ২৫ শতাংশ ও ড্রিংকসে ১০ শতাংশ প্রাকৃতিক উপাদান থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল।
বিএসটিআই জুস ও ড্রিংকসের এই নতুন মান নির্ধারণ করে গত বছরের জুনে। এর পরই প্রাণের আট ধরনের ড্রিংকসের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। নতুন এই মান নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চলতে থাকে বিএসটিআইয়ের নানা আলোচনা। তবে বিএসটিআই তাদের নির্ধারিত মানেই অটল থাকে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই মান এ বছরের জুন থেকে কার্যকর হয়েছে।
জুসে ফলের প্রাকৃতিক উপাদান কম থাকায় আগে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই থেকে অনুমোদন নিয়ে জুস উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ফ্রুটো, আকিজ গ্রুপের ফ্রুটিকা, গ্লোবের ম্যাঙ্গোলি, আবুল খায়ের গ্রুপের স্টারশিপ, সজীব গ্রুপের সেজান। বিএসটিআই বলছে, নতুন মান নির্ধারণের পর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই এখন জুসের বদলে ড্রিংকসের লাইসেন্স নিয়েছে।
ফলের ড্রিংকস বিএসটিআইয়ের ১৫৫টি বাধ্যতামূলক পণ্যের আওতাভুক্ত নয়। অর্থাৎ যে ১৫৫টি পণ্য অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে বাজারজাত করতে হয়, তার মধ্যে ড্রিংকস পড়ে না। তবে বিএসটিআইয়ের লোগোসহ ড্রিংকস বাজারজাত করতে চাইলে বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুযায়ী ওই পণ্যের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত (ভলান্টারি) লাইসেন্স নিতে হয়। তবে জুস ১৫৫টি বাধ্যতামূলক পণ্যের অন্তর্ভুক্ত। বিএসটিআই জুস-ড্রিংকসের তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়।
বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন মান নির্ধারণের ঠিক আগে দু-একটি প্রতিষ্ঠান তাদের জুসের লাইসেন্স নবায়ন করেছিল। সেদিক থেকে হয়তো দু-একটি প্রতিষ্ঠানের জুস তৈরির লাইসেন্স আছে। তারাও আর জুস তৈরি করছে না। কারণ, তা তৈরি করতে হবে নতুন মান অনুযায়ী।’
তবে নতুন মান নির্ধারণের পর বাংলা-ডাচ্ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান আনারসের জুসের একটি লাইসেন্স নেয়। বাংলাদেশ ও হল্যান্ডের যৌথ বিনিয়োগে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটির জুসের নাম ‘আই এম রিয়েল’। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুসটি বাজারজাত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা টাঙ্গাইলের মধুপুরে।
জুস-ড্রিংকসের নতুন মান নির্ধারণের পর গত বছরের অক্টোবরে মানহীন জুস-ড্রিংকসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিএসটিআই। সে সময় বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের ফ্রুট ড্রিংকসের লাইসেন্স বাতিল করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ছিল প্রাণের আট ধরনের ফ্রুট ড্রিংকস, প্রমি অ্যাগ্রো ফুডসের প্রমি (লিচি ও অরেঞ্জ), মডার্ন ফুড প্রোডাক্টের ফ্রুট ড্রিংকস মডার্ন, নিউট্রি অ্যাগ্রো ফুডস অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ফ্রুট ড্রিংকস নিউট্রি অরেঞ্জ, সাফা কনজুমারস প্রোডাক্টসের ফ্রুট ড্রিংকস রকস্টার।
অভিযোগ ছিল, এসব ড্রিংকসে যে ফলের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই ফলের ১০ শতাংশ প্রাকৃতিক উপাদান খুঁজে পায়নি বিএসটিআই।