আমদানিকারকদের বাড়তি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে

গতকাল বেশ কয়েকজন আমদানিকারককে আমদানি দায় মেটাতে ডলারপ্রতি গুনতে হয়েছে ৯২-৯৩ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামে এখনো অনেক ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন না আমদানিকারকেরা। আমদানির দায় মেটাতে এখনো আমদানিকারকদের ডলারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৯২-৯৩ টাকা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

আমদানিকারকেরা বলছেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ডলার বিনিময়মূল্য বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন ওই দামে যদি ডলার পাওয়া না যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

চট্টগ্রামভিত্তিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম আর বাড়তি দাম দিতে হবে না। কিন্তু মঙ্গলবারও ৯১ টাকার বেশি দামে আমদানি বিল নিষ্পত্তি করতে হয়েছে। এতে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।’

ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম আর বাড়তি দাম দিতে হবে না। কিন্তু মঙ্গলবারও ৯১ টাকার বেশি দামে আমদানি বিল নিষ্পত্তি করতে হয়েছে।
আবুল বশর চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বিএসএম গ্রুপ

ডলারের সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের ৭টি ব্যাংক এই ডলার কিনেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক কিনেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ও রূপালী ব্যাংক কিনেছে ১ কোটি ডলার। বাকি ডলার পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনসহ আর দুটি বেসরকারি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের কাছে প্রতি ডলার ৮৯ টাকায় বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গতকালই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির বিল পরিশোধ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। আর রূপালী ব্যাংক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানির বিল পরিশোধ করেছে। ঢাকা ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক খাদ্যশস্য ও জ্বালানি আমদানির বিল পরিশোধ করেছে।

জানা যায়, বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক গতকাল চট্টগ্রামের একটি শীর্ষ খাদ্যপণ্য আমদানিকারকের কাছে প্রতি ডলারের জন্য ৯১ টাকা ৭৫ পয়সা দাম নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্যাংকের শাখাটি ওই আমদানিকারককে জানায়, আগে ডলার ৯৪ টাকায় কেনা হয়েছে, এ জন্য কম দামে দেওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে মেমোরিয়াল দিবসের ছুটির থাকায় গতকালও দেশের ব্যাংকগুলোতে তেমন প্রবাসী আয় আসেনি। কারণ, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি হয় নিউইয়র্কের ব্যাংকের মাধ্যমে। এই কারণে রপ্তানি বিলও এসেছে কম। ফলে ডলারের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। আর প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য ডলারের দাম বেঁধে দিলেও বিদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বিদেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করছে। আর পরে তা এ দেশের ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে কেনার প্রস্তাব দিচ্ছে। এসব এক্সচেঞ্জ হাউস বেশি দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করায় বেঁধে দেওয়া দামে ডলার কিনতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে এখন যে ডলার রয়েছে, তা ৯২-৯৪ টাকায় কেনা। এ জন্য কেউ ডলার বিক্রি করছে না। আর যে দামে ডলার কিনেছে, আমদানিকারকদের কাছে তার কম দাম নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ডলারের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত আছে। তারা বাজারে ডলারের জোগান দিয়ে যাচ্ছে।

ডলার-সংকট কাটাতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) নেতাদের সঙ্গে সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর রোববার সন্ধ্যায় ডলারের দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এতে আন্তব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রিতে ডলারের দাম ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলারের সরবরাহ কম থাকায় এই দামে সব লেনদেন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ডলারের দাম আরও বাড়াতে নতুন করে প্রস্তাব দিতে পারে বাফেডা ও এবিবি।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন বলেন, ‘ডলার সরবরাহ কম থাকলেও আমরা নির্ধারিত দরে লেনদেন করছি। চেষ্টা করছি, নির্ধারিত দামে ডলার সংগ্রহ করার।’