আমদানি শুল্কে প্রবৃদ্ধি ২০%

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি পর্যায়ে শুল্ক, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে দেশের আমদানি খরচ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাসে ধরে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকারকদের খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াও আমদানিকারকদের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, পণ্য আমদানিতে ডলার ব্যবহার করা হয়। ফলে আগে পণ্য আমদানিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। তবে এতে সুফল পাচ্ছে শুল্ক বিভাগ। কারণ, তাদের আদায় বেড়ে গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পণ্য ও সেবা আমদানির পরিমাণ তেমন না বাড়লেও ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়েছে। আমদানিকারক যে দামে পণ্য আমদানি করেন, সেই দামটাই হলো ট্যারিফ মূল্য। যাচাই–বাছাই করে এই ট্যারিফ মূল্য ঠিক করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় একটি পণ্যের দাম ছিল ১০০ টাকা। এটিই পণ্যটির ট্যারিফ মূল্য। এর বিপরীতে আমদানিকারককে ২০ টাকা শুল্ক–কর দিতে হলো। আবার মে মাসে এসে ওই পণ্যের দাম ১২০ টাকা হলো। এবারে এটিই ওই পণ্যের ট্যারিফ মূল্য। তখন আমদানিকারককে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে ২৪ টাকা। এই দফায় তাঁকে ৪ টাকা বাড়তি কর দিতে হবে। পাঁচ মাসের ব্যবধানে পাওয়া এই ৪ টাকাই হলো শুল্ক বিভাগের বাড়তি আয়।

বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেলের দাম বেশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১৩৯ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠেছে। এখনো জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের ওপরেই আছে। অন্যদিকে কয়েক মাস আগে যে ভোজ্যতেলের টনপ্রতি দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ডলার, তা এখন ১ হাজার ৯০০ ডলারের ওপরে। পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি, অন্যান্য কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্যের দামও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের অন্যতম কাঁচামাল সুতার দামও বেশ চড়া।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট), সম্পূরক শুল্কসহ সব মিলিয়ে ৬৫ হাজার ৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ওই ৯ মাসে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ। গত এক দশকে এমনটা দেখা যায়নি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শর্তের কারণে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার ফলে দিন দিন শুল্ক বিভাগের আয় ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের তুলনায় কমছিল। কিন্তু এবারে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপরীত চিত্র দেখা গেল।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, এটি সাময়িক সুফল, টেকসই হবে না। এ ধরনের আমদানি শুল্ক প্রবাহের ওপর ভরসা করে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করা ঠিক হবে না।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৯ মাসে আয়কর বিভাগের চেয়ে আমদানি পর্যায়ের শুল্ক-কর বেশি আদায় হয়েছে, যা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। ৯ মাসে আয়কর আদায় হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এটি গত বছরের চেয়ে আট হাজার কোটি টাকা বেশি। আয়করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে ৯ মাসে পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছে ভ্যাট বিভাগ। ভ্যাট বিভাগের আয় দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু পণ্যের ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এসব কারণে শুল্ক-কর আদায় বেশি আদায় হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।