আমরা দেশেই আন্তর্জাতিক মানের টাইলস উৎপাদন করছি

সিরামিক টাইলস উপখাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্র বাণিজ্য প্রতিবেদক।

এম এ জব্বার

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ডিবিএল সিরামিকস নতুন নতুন টাইলস আনার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, সেটি কি অব্যাহত আছে?

এম এ জব্বার: সব ধরনের ভবন ও বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণের চাহিদা মেটাতে মার্জিত ও উচ্চমানের সিরামিক টাইলস বিপণনের প্রতিশ্রুতিতে ২০১৭ সালে ডিবিএল সিরামিকস যাত্রা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কারখানায় সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও অনন্য নকশার পণ্য উৎপাদনে টেকসই বিনিয়োগে জোর দিয়ে আসছে। এতে সফলতা পাওয়া যায়। শুরুতে নতুন নতুন টাইলস নিয়ে আসার যে লক্ষ্য ছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। বাজারে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রিমিয়াম ও গুণগত মানের টাইলস আসছে। সিরামিক শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খাতগুলোর একটি। সিরামিক পণ্যের স্থানীয় চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নগরায়ণের অভিজ্ঞতা টেকসই হয়েছে। এ দেশের সিরামিক কোম্পানিগুলো এখন স্থানীয় চাহিদার ৮৫ শতাংশ পূরণ করছে। সব মিলিয়ে আগামী ৫ বছরে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম খাত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সিরামিক শিল্প। স্থানীয় টাইলস কোম্পানিগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ২০ কোটি বর্গ মিটার।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: টাইলসের রপ্তানি সম্ভাবনা কেমন? বাংলাদেশ কেন কাজে লাগাতে পারছে না?

এম এ জব্বার: শিল্পের রপ্তানি বাড়াতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিক্রির পাশাপাশি ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনা এবং আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করতে হবে। সে অনুযায়ী ডিবিএল সামনের দিনগুলোতে সিরামিকস ব্যাপক পরিসরে বৈচিত্র্যময় নকশা ও প্রিমিয়াম মানের টাইলস রপ্তানি করবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সিরামিক খাতে বর্তমানে দেশি–বিদেশি অনেকগুলো কোম্পানি ব্যবসা করছে। নতুন বিনিয়োগও আসছে। এই খাতে কি আরও বিনিয়োগের সুযোগ আছে?

এম এ জব্বার: আমি আগেই বলেছি, দেশীয় সিরামিক কোম্পানিগুলো স্থানীয় চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি পূরণ করছে। এ খাতে আরও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি বাড়াতে পারি। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি শক্ত ও আস্থাশীল অবস্থান গড়ে তুলতে আমাদের প্রয়োজন যুগোপযোগী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ জনবল, যা একমাত্র পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব। উদ্ভাবনী পণ্য তৈরিতে দরকার গবেষণা ও টেস্টিং। আমরা মনে করি, বিনিয়োগ কেবলই আর্থিক নয়; বরং জনবল, জ্ঞান ও প্রশাসনের সহযোগিতা মিলেই ফলপ্রসূ ফলাফল নিশ্চিত করা সম্ভব।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাদের প্রদর্শনী কেন্দ্র থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

এম এ জব্বার: বর্তমানে ডিবিএল সিরামিকসের চারটি এক্সক্লুসিভ ডিসপ্লে সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ঢাকায়—হাতিরপুলের নাসির ট্রেড সেন্টারে ও অন্যটি বারিধারায়। বাকি দুটি সিলেট ও রংপুরে। ইউরোপিয়ান নকশা ও আধুনিকতার ধাঁচে ডিসপ্লে সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সব ডিসপ্লে সেন্টারে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। খুব শিগগির আমরা চট্টগ্রাম আর বরিশালে আরও দুটি এক্সক্লুসিভ ডিসপ্লে সেন্টার চালু করতে যাচ্ছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ডিবিএল সিরামিকসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? শিগগিরই কি ব্যবসা সম্প্রসারণ করবেন?

এম এ জব্বার: ডিবিএসিরামিকস সব সময় উদ্ভাবন, নতুন ধারা ও ক্রমবর্ধমান গতিতে এগোতে চায়। শুরু থেকে ডিবিএল সিরামিকস নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে উদ্ভাবন, গুণমান এবং নকশায় সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ডিবিএল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তা ছাড়া আমরা সব সময়ই পণ্যে বৈচিত্র্য আনায় বিশ্বাসী। যার ফলে আমাদের ক্রেতারাও আমাদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশে সিরামিক টাইলস শিল্পের যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। এমনকি এক দশক আগেও আমাদের নির্ভর করতে হতো আমদানি করা টাইলসের ওপর। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে আমরা দেশেই আন্তর্জাতিক মানের টাইলস উৎপাদন করছি। নতুন নতুন ক্যাটাগরির টাইলস নিয়ে আসছি। উৎপাদন লাইন সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন প্রকল্প আমাদের পাইপলাইনে রয়েছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে অ্যাডভান্সড সিরামিকস অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে বেশ কিছু কাজ করছি। আধুনিক ইউরোপিয়ান প্রোডাকশন টেকনোলজি সমৃদ্ধ দেশের বৃহত্তম সিরামিক উৎপাদক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি আমরা।