আরও ২ বছর পণ্যমূল্য বাড়তি থাকবে

এ বছর দিন ভালো যাবে না বিশ্ববাসীর। বাড়তি পণ্যমূল্যের কারণে চাপের মুখে থাকবে মানুষ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠন কর্তৃক
প্রণীত খাদ্যের মূল্যসূচক ইতিমধ্যে ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে। এবার বিশ্বব্যাংকের পণ্যমূল্যবিষয়ক প্রতিবেদনে জানা গেল, চলতি বছর মানুষের ব্যবহৃত সব পণ্যের দামই অনেকটা বাড়তি থাকবে। ২০২৩ ও ২৪ সালেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

পণ্যের এই বাড়তি মূল্যের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষত খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে। বিশ্ববাজারে গমের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হচ্ছে ইউক্রেন। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এবার তাদের অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে। ফলে গমের সরবরাহ কমে যাবে এ বছর। তার সঙ্গে আছে জ্বালানি। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ।

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর সাত বছরের মধ্যে জ্বালানির দাম এই প্রথম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর জ্বালানির দাম বাড়লে সবকিছুর দামই বাড়ে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে পণ্যমূল্য অনেকটাই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এমন এক সময়ে এই যুদ্ধ শুরু হলো, যখন বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন সে হারে বাড়েনি।

এ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে জ্বালানির দাম চার গুণের বেশি বেড়েছে। ১৯৭৩ সালে জ্বালানি তেলের সংকটের পর ২৩ মাসের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দাম আর কখনো এতটা বাড়েনি। একই সময়ে বিশ্ববাজারে সারের দাম বেড়েছে ২২০ শতাংশ, ২০০৮ সালের পর ২৩ মাসের ব্যবধানে সারের দাম এতটা আর কখনো বাড়েনি। এ সময়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। এতে একধরনের মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, যেসব পণ্যের সরবরাহ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসছে, সেসব পণ্যের দাম আরও কিছুকাল বাড়তি থাকবে। তিনটি কারণে এটি হতে পারে। প্রথমত, এক পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ সাধারণত বিকল্প আরেক পণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে, কিন্তু এখন প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়তি। যেমন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এবার গ্যাস ও কয়লার দামও বাড়তি। আগে সাধারণত এমনটা হতো না।

দ্বিতীয়ত, একধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিষয়টি হলো, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি উপকরণ সারের দামও বেড়েছে। একইভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধাতু উত্তোলন ও পরিশোধনের খরচও বেড়েছে, যেমন অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ আকরিক ও ইস্পাতের। আর ধাতুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির উপকরণের ব্যয়ও বেড়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য উৎপাদনের ব্যয়ও বাড়ছে, এর মধ্যে মজুরি বৃদ্ধি, পরিবহন ও মজুত ব্যয় বৃদ্ধি, সুদহার বৃদ্ধি—এসবও ধরতে হবে।

তৃতীয়ত, জ্বালানির উচ্চমূল্য মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক দেশের সরকার শুল্ক হ্রাস করার পাশাপাশি ভর্তুকি দিয়েছে। এতে হয়তো জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সাময়িকভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, কিন্তু অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য তা বিশেষ কাজের কিছু নয়। এতে বরং জ্বালানির চাহিদা আরও বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনের পূর্বাভাস, চলতি বছর অধিকাংশ পণ্যের মূল্য ২০২১ সালের চেয়ে অনেকটা বাড়তি থাকবে। শুধু তাই নয়, গত ৫ বছরের তুলনায় এসব পণ্যের মূল্য ২০২৩-২৪ সালে বাড়তি থাকবে। আর জ্বালানির মূল্য তো এ বছর ৫০ শতাংশ বেশি থাকবে, এরপর ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমে আসবে।