আরেক দফা বাড়ল মসুর ডালের দাম

মসুর ডাল
ফাইল ছবি

বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন থামতে চাইছে না। প্রতিনিয়ত বাড়ছে কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম। নতুন করে আবারও বেড়েছে মসুর ডালের দাম। এক সপ্তাহ আগে মানভেদে মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়েছিল। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে নুডলস ও রসুন। আর ঈদের আগে থেকে সয়াবিন তেল নিয়ে যে অস্থিরতা বাজারে দেখা দিয়েছে, তা এখনো থামেনি। এ কারণে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এখনো বাজারে সয়াবিন তেল মিলছে না। বিশেষ করে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। এ কারণে পাঁচ লিটারের বোতল খুলে বাড়তি দামে আধা লিটার, এক লিটার করে বিক্রি করা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

টিসিবির তালিকা অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীতে মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এ ডালের দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। থেমে নেই মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডালের দামও। টিসিবির হিসাবে সরু দানার ডালের কেজি এখন সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এ ডালের দাম ছিল ১৩০ টাকা কেজি। সরকারি হিসাবে মাঝারি দানার মসুর ডালের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মসুর ডালের এ তিন ধরনের দাম আরও বেশি।

আরও পড়ুন

মিরপুরের রূপনগর ও মগবাজারে ছোট দানার মসুর ডালের কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। অর্থাৎ টিসিবির হিসাবের চেয়ে এই দুই বাজারে ছোট দানার মসুর ডালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট দানার মসুর ডাল পাইকারি বাজার থেকেই কিনতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। ক্রেতাভেদে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ করছেন তাঁরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফরিদগঞ্জ স্টোরের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে মসুর ডালের দাম আবারও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ ডালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। কেউ পরিমাণে বেশি নিলে তাঁর কাছ থেকে নিচ্ছি ১৩৫ টাকা। আর পরিমাণে কম নিলে এ দাম ১৪০ টাকা। যেহেতু আমাদের মুনাফার সীমা কমেছে। এর থেকে কম দামে বিক্রি করলে আমাদের খরচ পোষাবে না।’

এদিকে, আটা-ময়দার মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন করে বেড়েছে নুডলস ও পাস্তার দাম। এ দুটি পণ্য এখন বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় নাশতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছোট ছোট ১২ প্যাকেটের নুডলসের একটি প্যাক ঈদের আগে বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। গতকাল সেই দাম বেড়ে হয়েছে ২১৫ টাকা। আর ছোট ছোট আট প্যাকেটের সমন্বয়ে তৈরি নুডলসের মাঝারি প্যাক বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। ঈদের আগে এ প্যাক ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতকালই কোম্পানিগুলো নতুন দামের নুডলসের প্যাক বাজারে ছেড়েছেন।

ঈদের আগে ৪০০ গ্রামের দেশি পাস্তার একটি প্যাকেটের দাম ছিল ৬৫ টাকা। গতকাল কারওয়ান বাজারে তা বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়। এ ছাড়া খোলা বিক্রি হওয়া পাস্তার কেজি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।

টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

গতকাল কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিনের ১ লিটারের বোতল না থাকায় বিক্রেতারা ৫ লিটারের বোতল খুলে আধা লিটার, এক লিটার করে বিক্রি করছেন। এতে করে সরকারে বেঁধে দেওয়া ১৯৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ক্রেতারা কিনছেন প্রতি লিটার ২১০-২১৫ টাকায়। তবে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম তেলও কিনছেন। এই প্রতিবেদকের সামনে একজন বিক্রেতা ৩০০ গ্রাম সয়াবিন তেলের দাম নেন ৭০ টাকা। সরকার বেঁধে দেওয়া লিটারপ্রতি দাম ১৯৮ টাকা ধরে হিসাব করলে ৩০০ গ্রাম তেলের দাম হওয়ার কথা ৫৯ টাকা ৪০ পয়সা।

মেরুল বাড্ডা থেকে কারওয়ান বাজারে মেসের বাজার করতে এসেছিলেন নাহিদ সরোয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে আমরা পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে বাজার করা বাদ দিয়েছি। কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করলে দামে কিছুটা সাশ্রয় হবে, সেই আশায় এসেছিলাম। কিন্তু এখন পাড়ার দোকানের আর কারওয়ান বাজারের দামের খুব বেশি পার্থক্য নেই। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের মেসের খাবারের খরচ ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে।’