ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন দুই লাখ পর্যটকের সম্ভাবনা

সিলেটে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদ–পরবর্তী চার দিন (বুধ থেকে শনিবার পর্যন্ত) স্থানীয় পর্যটকসহ প্রতিদিন গড়ে দুই লাখ পর্যটক পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় উপস্থিত থাকবেন বলে সিলেট অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশ আশা করছে। সে অনুযায়ী চার দিনে গড়ে আট লাখ পর্যটক উপস্থিত থাকবেন। এতে সিলেটের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা জাফলং, সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাইসহ বিভিন্ন চা-বাগান, পাহাড় ও ঝরনা দেখতে ভিড় জমাবেন। বছরের সব সময়ই সিলেটে পর্যটকদের ভিড় জমলেও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বর্ষা মৌসুমেই স্বরূপে আবির্ভূত হয়। মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজারেও ভিড় জমে পর্যটকদের।

এর বাইরে স্থানীয় পর্যটকেরাও ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ঘুরে বেড়াবেন। সব মিলিয়ে ঈদ–পরবর্তী চার দিন পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় আট লাখ পর্যটকদের উপস্থিতিতে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন অনেকই।

সিলেটের হোটেল-মোটেলসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকেরা হোটেল বুকিং করছেন। এর মধ্যে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোর ৭৫ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। যাঁরা হোটেল বুকিং দিচ্ছেন, তাঁরা ঈদ–পরবর্তী দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত বুকিং দিয়ে রাখছেন। সেই সঙ্গে যাতায়াতের ব্যবস্থাও কোনো কোনো হোটেল থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সিলেট ব্রিটানিয়া হোটেলের ব্যবস্থাপক (বিপণন) কাউসার খান বলেন, এখন পর্যন্ত (গতকাল সোমবার) হোটেলের প্রায় ৭৫ শতাংশের অধিক কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা হয়েছে। পর্যটকেরা ঈদের পরদিন থেকে কক্ষ বুকিং করে রাখছেন। এ ছাড়া ঈদের দিনও বেশ কয়েকটি কক্ষ বুকিং করা রয়েছে।

কাউসার খান আরও বলেন, সিলেট মহানগর এলাকার প্রায় সব কটি হোটেল-মোটেলের একই অবস্থা। ছুটিতে হোটেল-মোটেলগুলোর সব কক্ষ পরিপূর্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে শতকোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঈদে সিলেটে আবহাওয়ার অবস্থা বিরূপ থাকতে পারে। এতে পর্যটকদের উপস্থিতিতে কিছুটা ভাটা পড়বে। অন্যদিকে, উচ্চবিত্ত পর্যটকদের বেশির ভাগ ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যান।

এ ছাড়া সিলেটের মধ্যম আয়ের হোটেল-মোটেলগুলোর তুলনায় থ্রি স্টার থেকে ফাইভ স্টার মানের হোটেল-মোটেলগুলোয় বুকিং কম হচ্ছে। এটাও ভাবনার বিষয় বলে মনে করেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সবকিছুর পরও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, শতকোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা নেই।

সিলেট অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ঈদ–পরবর্তী সময়ে চার দিন সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় স্থানীয় পর্যটকসহ গড়ে আট লাখ পর্যটক উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা আশা করছি। এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি নিজে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের সতর্কতার জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নির্দেশনামূলক ফেস্টুন লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য পর্যটকদের পানিতে নামার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ এরই মধ্যে সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া সাদাপোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে।

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা ও গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঈদে পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদ–পরবর্তী ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিলেট মহানগর ও জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের সমন্বয়ে টহল দল বৃদ্ধিসহ বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও সমন্বয় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল নিশানা কিংবা নির্দেশনামূলক বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।