অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জ জেলার সম্ভাবনার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

শেখ মনোয়ার হোসেন: সিরাজগঞ্জের অর্থনৈতিক অবস্থা চারটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প; দুগ্ধ ও মাংস শিল্প; বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের মিঠাপানির মাছ, শর্ষে ও মধুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য এবং যমুনা নদীর বিশাল জলরাশি ও চরাঞ্চলে মরিচ, পাট, ভুট্টাসহ নানা রকম কৃষিপণ্য। উন্নত বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভাবনাময় ভিত্তিগুলোকে আধুনিকায়ন করতে পারলেই সিরাজগঞ্জ হয়ে উঠবে গোটা উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আস্থার কেন্দ্র।

অর্থনৈতিকভাবে সিরাজগঞ্জকে সমৃদ্ধ করতে তরুণদের কর্মসংস্থান কতখানি?

শেখ মনোয়ার হোসেন: সিরাজগঞ্জকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধিশালী করতে হলে প্রথমেই বেকার তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। তবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। কারণ, আমাদের প্রশিক্ষিত জনবলের খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি সুষ্ঠু যোগাযোগব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে।

এখনো এই জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই সিরাজগঞ্জকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে এই শিল্পের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে জোর দিতে হবে।
শেখ মনোয়ার হোসেন পরিচালক, সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল

এই জেলার ওপর দিয়ে প্রবহমান যমুনা নদীর বিশাল জলরাশিকে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে?

শেখ মনোয়ার হোসেন: যমুনা নদী সংস্কারের মাধ্যমে এর বিশাল জলরাশিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই নদীর দুই তীরে ‘কৃত্রিম সমুদ্রসৈকত’-এর মতো বিশাল পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। দুই তীরজুড়ে তালসহ উপযোগী বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশও সংরক্ষণ করা যায়। একই সঙ্গে এই নদীর তীরে বা আশপাশে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা যেতে পারে। এ ছাড়া যমুনা নদীকে ঘিরে আন্তজেলা নৌপথ চালু করা যায়। এ জন্য ওয়াটার বাসও নামানো যেতে পারে

সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে এগিয়ে নিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

শেখ মনোয়ার হোসেন: সেই আদিকাল থেকেই সিরাজগঞ্জ তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ জেলা। এখনো এই জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই সিরাজগঞ্জকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে এই শিল্পের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী যাতে বিশ্বমানের হয়ে ওঠে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপর মানসম্পন্ন সেই দেশীয় বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ জেলা কীভাবে গোটা উত্তরবঙ্গের সম্ভাবনা হতে পারে?

শেখ মনোয়ার হোসেন: আমরা আশা করছি, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ এখানে সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে বিনিয়োগবান্ধব সংস্কৃতি চালু এবং শিল্প ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে এই জেলা হবে গোটা উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম কেন্দ্রস্থল।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে যমুনা নদীর দুই তীরে ও এর আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় মানুষ হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়েও কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়া করতে পারবে। আর আশপাশের ৩০ কিলোমিটার এলাকায় রেল ও নৌপথের যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে, যাতে কর্মজীবীরা বাড়ি থেকে এসেই কর্মস্থলে কাজ করে যেতে পারেন।

জেলার দুগ্ধশিল্প, বৃহত্তর চলনবিলের মৎস্যসম্পদ ও কৃষিপণ্যকে কীভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগানো যায়?

শেখ মনোয়ার হোসেন: বর্তমানে এই জেলার দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং মিঠাপানির মাছ ও কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পণ্য বিক্রির এই কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। তাহলে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। এ জন্য অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।