প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা ৩৬৭০

বিডার প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই বছরে উদ্যোক্তা হয়েছেন ৩,৬৭০ জন। তাঁরা বিনিয়োগ করেছেন ৯৮৫ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হয়েছে ৩২,০০০ মানুষের।

সাঈদুন্নেসা অনিক ২০১৬ সালে ছোট পরিসরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সফটওয়্যার ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তাঁর ব্যবসা সংকুচিত হতে থাকে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন তিনি। পরের মাসে জানতে পারেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিনা পয়সায় এক মাসের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে সাঈদুন্নেসা এরই মধ্যে বি-বে নামে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে ১০ জন কর্মী কাজও করছেন।

এভাবে সরকারি সংস্থা বিডা থেকে ২০১৯ ও ২০২০ সালে প্রশিক্ষণ নিয়ে সারা দেশে উদ্যোক্তা হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭০ জন। তাঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৯৮৫ কোটি টাকার মতো, আর কর্মসংস্থান হয়েছে ৩২ হাজার মানুষের।

দেশে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিডা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আওতায় সারা দেশ থেকে বিনিয়োগে আগ্রহী এমন ২৪ হাজার শিক্ষিত বেকারকে বাছাই করা হয়। এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি পাস ও বয়স ১৮-৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে বিডার ৬৪টি জেলা কার্যালয় ২০ হাজার ৮০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ-পরবর্তী উদ্যোক্তা হওয়ার হার ১ থেকে ২ শতাংশ, সেখানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার হার ২০ শতাংশ।

বিডা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন এমন পাঁচজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, ব্যবসা কীভাবে শুরু করতে হয়, কোন ব্যবসা করলে লাভবান হওয়া যায়, কীভাবে ব্যবসার পরিকল্পনা করতে হয়—প্রশিক্ষণে এসব শেখানো হয়।

আরিফ ইকবাল নামের এক নবীন গত বছরের জুনে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগে রাজধানীর দক্ষিণখানে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছিলাম, কিন্তু এগোতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি।’

বিডার কর্মকর্তারা জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া ব্যক্তিরা তিনটি উপায়ে বিনিয়োগ করেছেন—কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, কেউ ঋণ নেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে, আবার কেউ আত্মীয়স্বজন থেকে ঋণ নেন।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই বছরে মৎস্য খাতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছেন নতুন উদ্যোক্তারা। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতেও যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া প্লাস্টিক, চামড়া, পোশাক, কৃষিজাত পণ্য খাতেও বিনিয়োগ হয়েছে।

রাজধানীর উত্তরখানে মাছের চাষ শুরু করেন রিংকু রিচার্ড। এরই মধ্যে তিনি দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি জানান, মাছ চাষ কীভাবে শুরু করতে হয়, পরবর্তীকালে কী কী জিনিসের প্রয়োজন হয়—এসব বিষয় প্রশিক্ষণে শেখানো হয়েছিল।

জানতে চাইলে বিডার উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খান বলেন, ‘বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের আমরা টার্গেট করি। দুই বছরে ২৪ হাজার বেকারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটিতে সাফল্য আসায় এটি আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা।

বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশেই বিডার কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে প্রতি ব্যাচে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জেলার সফল ব্যবসায়ী, কর কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যাতে সরকারি সেবা পেতে সহজ হয়। করোনার মধ্যে এখন অনলাইনে চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কেউ প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়।

আবেদনকারীদের প্রাথমিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি কমিটি।