মন্দায় জন্ম নেওয়া সফল উদ্যোগ

মানুষ যখন কোনো সমস্যায় থাকে তখন তার সমাধান খোঁজা শুরু করে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটাই সুযোগ ব্যবসা শুরু করার। তাই ব্যবসা উদ্যোগ তৈরি করতে হলে আগে একটা সমস্যা খুঁজে বের করতে। সে হিসেবে অর্থনৈতিক মন্দা হচ্ছে নতুন উদ্যোগ খুঁজে বের করার একটি সময়। মনে হতেই পারে মন্দায় যখন স্বাভাবিক ব্যবসা লাটে উঠে তখন আবার নতুন ব্যবসা? কিন্তু বিষয়টি একদম বাড়িয়ে বলা নয়, অতীতেও এমন হয়েছে। এমনকি ২০০৮ সালের মহামন্দাতেই এমন অনেকগুলো উদ্যোগ তৈরি হয়েছে, যা এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। তাদের কথাই বলব আজ—

এয়ারবিএনবি

যাঁরা নিয়মিত বিদেশ যান আর দীর্ঘ সময় থাকেন, তাঁদের কাছে এয়ারবিএনবি বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয়—এটি অল্প সময়ে, কম খরচে বাড়িভাড়ার উদ্যোগে, যাঁদের উপস্থিতি আছে বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরে। এয়ারবিএনবি শব্দটা ভাঙলে পাওয়া যায় এয়ার মানে বাতাস, প্রথম বি হচ্ছে বেড এবং দ্বিতীয় বি ব্রেকফাস্ট। দুই রুমমেট জোয়ি গ্যাবিয়া ও ব্র্যায়েন চেসক্রি ২০০৭ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে বাতাস দিয়ে ফোলানো বিছানা ও সকালের নাশতার সেবা দিয়ে শুরু করেন উদ্যোগটি। লক্ষ্য ছিল মানুষকে অন্য শহরে এমন আবাসের সন্ধান দেওয়া, যেটা খুব কম খরচে পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে তাঁরা বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির একটি অতিরিক্ত ঘর বা খালি পড়ে থাকা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে বড় করতে থাকে তাদের ব্যবসা।

প্রায় ১২ বছর পর এয়ারবিএনবি এখন ৩১ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। এ সাফল্যের পেছনে অনেকটাই কৃতিত্ব দিতে হয় ২০০৮ সালের মহামন্দাকে। মহামন্দায় যখন মানুষের ব্যয়ক্ষমতা কমে যায়, এয়ারবিএনবি হয়ে ওঠে সাধ্যের মধ্যে খুব জরুরি একটি অনুষঙ্গ।

উবার

উবারের জন্ম হয়েছিল ২০০৮ সালে, প্যারিসে। দুই বন্ধু ট্রাভিস ক্যালানিক ও গ্যারেট ক্যাম্প প্যারিসে একটা টেক কনফারেন্সে যোগ দিতে এসেছিলেন। কনফারেন্স শেষে তাঁরা কিছুতেই একটা ক্যাব খুঁজে পান না। তখনই তাঁদের মাথায় আসে উবারের মতো কিছু তৈরির বুদ্ধি। সামান্য এই বুদ্ধি শুধু যে মানুষের জীবনযাপন সহজ করেছে তা–ই নয়, চলাচলের খরচও কমিয়ে এনেছে অনেকটাই। সেই কম খরচাই ২০০৮–এর মন্দায় মানুষ লুফে নেয়। পরে এই পদ্ধতিতে মানুষ এতই সুবিধা খুঁজে পায় যে উবার এখন ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোম্পানি। যদি শুধু যাতায়াত নয়, খাবার পরিবহনসহ অনেক ধরনের সেবাই এখন দিয়ে থাকে তারা।

হোয়াটসঅ্যাপ

হাতে যখন টাকা না থাকে তখন মানুষ সম্ভব সব দিক থেকে টাকা বাঁচায়। তো ঠিক টাকা বাঁচানোর কথা চিন্তা করে নয়, হোয়াটসঅ্যাপ আসলে তৈরি হয়েছিল অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যোগাযোগের নিমিত্তে। ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি হয়। এর নির্মাতা জান কউম এবং ব্রায়েন অ্যাকটম তথ্যকে কোড আকারে নিয়ে সংযোগ তৈরি করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁরা সফল হন। হোয়াটসঅ্যাপ ফোনের নেটওয়ার্ককে মোটেই ব্যবহার করে না, ফলে খরচও হয় না এবং তা সহজেই জনপ্রিয়তা পায়। ২০২০ সালে এসে প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন, কোম্পানিটির আয় বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ইনস্টাগ্রাম

কেভিন সিস্ট্রম ও মাইক ক্রিগার নামে দুই প্রকৌশলী ইনস্টাগ্রাম শুরু করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ করবে ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে। ২০১০ সালে তৈরি হয় ইনস্টাগ্রাম। অ্যাপটি এখন বিশ্বের প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করেন আর তাদের কর্মী আছে ৪০০ জন।

পিন্টারেস্ট

শখ সেটা সেলাই করা হোক কি ছবি তোলা, উক্তি পড়া হোক কি ব্যায়ামের নির্দেশনা—সব যেখানে পাওয়া যাবে সেই অ্যাপটির নাম হচ্ছে পিন্টারেস্ট। বলতে পারে এটি আপনার ডিজিটাল স্ক্র্যাপবুক। এ প্রতিষ্ঠানটিও তৈরি হয় ২০১০ সালে যখন অর্থনীতিতে মন্দাতেই ছিল। তো ছোট ছোট টোটকা ভাগ করে নিয়ে অ্যাপটি মানুষের জীবন সহজতর করায় এটি এখন ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করছে। আর কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনার সময়ে মানুষের জীবনে যে অভাব ও চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা থেকেও তৈরি হতে পারে নতুন উদ্যোগ। শুধু ভেবে বের করতে হবে, ঠিক কী সেই উদ্যোগ, যা নাড়িয়ে দেবে পৃথিবীকে আর বিশাল উপার্জনের খাত হবে উদ্যোক্তার জন্য।