‘নারী উদ্যোক্তাদের সফলতার অন্যতম শর্ত প্রযুক্তিগত জ্ঞান’

DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ তাসলিমা মিজির গল্প

অনলাইনভিত্তিক চামড়ার ব্যাগ প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড ‘গুটিপা’র মূল প্রতিষ্ঠান ‘লেদারিনা’, যার স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মিজি। একটি স্থানীয় ব্যাগ কারখানার সঙ্গে নিজের ডিজাইনের কয়েকটি ব্যাগের নমুনা দেওয়ার মাধ্যমে শুরু করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি ব্যাগগুলোর ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। পরিচিতজনদের কাছে ভালোই সাড়া পান। তখন প্রতিষ্ঠানটি নিজের কাছে একটি শিশুর মতোই ছিল, কেবলই যেন ভূমিষ্ঠ হলো। প্রত্যাশা ছিল গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাবে। সেই ভাবনা থেকেই ব্র্যান্ডটির নাম দেন ‘গুটিপা’।

তাসলিমা তাঁর প্রতিষ্ঠানের ‘পণ্যদূত’ মনে করেন নিজের পরিচিতজন ও ব্যবহারকারীদেরই। তাঁরাই ‘গুটিপা’কে সবার সামনে পরিচিত করিয়েছে ও ধীরে ধীরে ডালপালা বেড়েছে প্রতিষ্ঠানের। আবার তাঁরাই হয়েছেন তাঁর পণ্যের মডেল, এটাই গুটিপার বড় অর্জন। কেন এ রকম একটা উদ্যোগ নিলেন? তাসলিমা বলেন, ‘আমাদের সমাজ মেয়েদেরকে নির্দিষ্ট একটা গণ্ডিতে আবদ্ধ করতে চায়। তাদেরও ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে, সে–ও সমাজকে কিছু দিতে চায় বা তার ভাবনাগুলোকে উদ্যোগের মাধ্যমে সবার সামনে নিয়ে আসতে চায়—এসব ব্যাপার কেন জানি সমাজ মানতে নারাজ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত ও স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার অধিকার রয়েছে। সেই স্বপ্ন থেকেই সমাজকে কিছু দিতে ও সমাজের অনেকের দায়িত্ব নিতেই আমি শুরু করেছি “গুটিপা”র।’

বর্তমানে তাসলিমা মিজির প্রতিষ্ঠান নারী–পুরুষের বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক ডিজাইনের ফ্যাশনেবল ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি সামগ্রী প্রস্তুত করছে। যাত্রাটা ফেসবুক পেজ থেকে শুরু হলেও এখন তার রয়েছে নিজস্ব অফিস এবং প্রায় ৫০ জনের নিজস্ব জনবল। বলতে গেলে গুটিপা এখন অনেক সমৃদ্ধ।

শুরুটা গুটি গুটি পায়ে হলেও প্রতিবন্ধকতা কম ছিল না। তাসলিমা স্মৃতিচারণা করেন, ‘আমার সন্তান হওয়ার পর নানান প্রতিকূলতার কারণে লেখালেখি ও সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করি। পরে এটা বাদ দিয়ে সৃজনশীল কিছু করার তাগিদে চামড়ার পণ্যের ব্যবসা শুরু করি। একাই। চলমান কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ব্যবসা ছেড়ে নতুন আরেকটি শুরু করতে প্রথমে একটু ধাক্কা সামলাতে হয়েছে।’ আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে তাসলিমা বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু করি।

নারীদের বাইরে কাজের ক্ষেত্রে পারিবারিক যে প্রতিবন্ধকতা থাকে তেমনটা আমারও ছিল, পাশাপাশি ছিল ঘরে ফেরার নির্দিষ্ট সময়সীমা। শুরুতে আমার প্রধান সমস্যাটা ছিল অর্থনৈতিক। এ ছাড়া আমাদের মার্কেট খুব একটা নারীবান্ধব নয়। যদিও এগুলোকে গুরুত্ব দিলে আজ হয়তো এ পর্যায়ে আসা সম্ভব হতো না। কিছুদিন পর অবশ্য ব্যবসার সফলতা দেখে পরিবারও সহযোগিতা শুরু করেছে।’

বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে তাসলিমা মিজির মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশেষ ভিডিও চিত্র। প্রথম আলো ডটকম ও শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের যৌথ আয়োজনে ‘DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ শিরোনামের ভিডিওগুলো প্রকাশ হয়েছে প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।

তাসলিমার মতে, সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বকীয়তা। চামড়ার প্রতি ভালো লাগা থেকেই মূলত শুরু হয় গুটিপার যাত্রা। সম্পূর্ণ দেশি কাঁচামালে তৈরি চামড়ার ব্যাগের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গুটিপা। চামড়া সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রং ও গঠন নির্ধারণ এবং সমসাময়িক ধারা অনুসরণ করে পণ্য তৈরি করাসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া দেশেই সম্পন্ন হয়। যখন নিজের দেশের কাঁচামাল, এ দেশের কারিগর দিয়েই তৈরি হয়, তখনই আত্মতৃপ্তি অনেক গুণ বেড়ে যায় তাসলিমার। যা তার সফলতার অন্যতম রহস্য বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায় পারিবারিক ও সামাজিক নানান চ্যালেঞ্জ ছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রযুক্তিগত জ্ঞান। নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই এদিকটায় পিছিয়ে থাকেন। তাই, এসব বিষয়ে শিক্ষালাভ, দক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা সফল নারী উদ্যোক্তার হওয়ার অন্যতম শর্ত।’

এখনো অনেকেই দেশি পণ্য কিনতে চান না। কিন্তু অদম্য আগ্রহী তাসলিমা মিজি ভবিষ্যতে এমন কিছু করে দেখাতে চান, যেখানে দেশি ব্র্যান্ড হিসেবে ‘গুটিপা’ প্রাকৃতিক কাঁচামালে পরিবেশবান্ধব প্রস্তুতকারক হিসেবে দেশি–বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর ভিড়ে স্বতন্ত্র হিসেবে উপস্থাপিত হবে।