নারী উদ্যোক্তা: শাবাব লেদার
স্বপ্ন দেখেন মাকসুদা খাতুন
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একদল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আমাদের চমৎকৃত করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের কেউ কেউ প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে কয়েক লাখ টাকা লোকসানও দিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের অনেকে নিজেই তাঁর প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করে নিচ্ছেন, কেউ সোনালি আঁশের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা নিয়েছেন। আবার কেউ একেবারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন দিনের আলো জ্বালাচ্ছেন। এ রকম সাধারণের মধ্যে অসাধারণ ছয় প্রতিষ্ঠানের সাত উদ্যোক্তা পেয়েছেন আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার-২০২২
মা-বাবার বড় মেয়ে মাকসুদা খাতুন ছোটবেলা থেকেই স্বাবলম্বী হতে চেয়েছেন। হিসাববিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্সসহ ফাইন্যান্সে এমবিএ করে কর্মজীবন শুরু করেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। চার বছর শিক্ষকতা করার পর সেটা ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন একটি বায়িং হাউসে। এরপর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি।
‘কোথায় জানি অপূর্ণতা। চাকরির ধরাবাঁধা গণ্ডির বাইরে স্বাধীনভাবে একটা কিছু করতে চেয়েছি।’—বললেন মাকসুদা। কিন্তু সাধ আর সাধ্য মেলেনি বলে নিজের মতো মানিয়ে–গুছিয়ে ভালোই চলছিল জীবন। মাকসুদার স্বামী মো. শোয়াইব হোসেন চামড়ার তৈরি হাতমোজা রপ্তানি করতেন। সেই ব্যবসায় একবার বড় ধরনের লোকসান হয়। সেই লোকসানের ধাক্কা সামলাতে মাকসুদা-শোয়াইব দম্পতি তাঁদের কেনা প্লট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু তাতেও দেনা শোধ হয়নি। তত দিনে মাকসুদা বুঝে গেছেন, চাকরির বেতনে সেই ঋণ শোধ করা যাবে না। কোনোভাবেই কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না শোয়াইব-মাকসুদা দম্পতি। একসময় মনস্থির করে ফেললেন, যেকোনো মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।
শুরু হলো নতুন পথচলা, নতুন এক যুদ্ধ। নিজের সব সঞ্চয় আর অলংকার বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা জোগাড় করলেন। সেই টাকা নিয়ে ২০১৬ সালে মাত্র পাঁচজন কর্মী নিয়ে হাজারীবাগে ‘শাবাব লেদার’-এর যাত্রা শুরু করেন।
মাকসুদা বলেন, ‘আগে থেকে স্বামীর চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা ছিল। আবার আমারও কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল বায়িং হাউসে। দুজনের দুই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই আমরা চামড়া পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করি।’
শুরুতে নিজেরাই ঘুরে ঘুরে বিপণিবিতানে পণ্য বিক্রি করতেন। প্রতিদিন ১৮-২০ ঘণ্টা কাজ করেছেন। এত কিছুর পরও প্রথম বছরে লোকসান গুনতে হয়েছে। মাকসুদা খাতুন বলেন, ‘শুরুতে আমার পরিচিত কিছু বায়িং হাউসের ক্রেতাদের কাছে কাজের নমুনা ও ছবি ই-মেইলে পাঠাতাম। পরে তাঁরা ওয়েবসাইট তৈরির পরামর্শ দেন।’
২০১৭ সালের মার্চে হঠাৎ এক ডাচ দম্পতি ব্যাগের কার্যাদেশ দেন। এ ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসার প্রসার হতে থাকে। সঙ্গে যুক্ত হলেন স্বামী শোয়াইব হোসেন।
করোনায় বড় ধরনের ধাক্কা খেলেও আবার ঘুরে দাঁড়ান মাকসুদা। শাবাবের কারখানায় চামড়ার তৈরি মানিব্যাগ, বেল্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, পাসপোর্টের কাভার, জ্যাকেট ও উপহারসামগ্রী উৎপাদন হয়। কর্মীর সংখ্যা ৪৮ জন। মাকসুদা স্বপ্ন দেখেন, একটি বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্স কারখানায় বৈশ্বিক বাজারের জন্য তৈরি করবেন নিজের পণ্য। শাবাব লেদারকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এগিয়ে নিেয় যেতে চান মাকসুদা খাতুন।