উনি কী বলেছেন আমার কাছে পরিষ্কার না: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
ছবি: সংগৃহীত

দেশের আর্থিক খাত দুর্বল নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে বলে সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘উনি কী বলেছেন আমার কাছে পরিষ্কার না, আর্থিক খাতে দুর্বৃত্তায়ন নেই। আমি তাঁর (দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য) প্রতি সম্মান ও বিশ্বাস রেখে বলতে পারি, সারা বিশ্বে সংকটের মাঝে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে আমরা এগিয়ে নিয়েছি, আমার মনে হয়, তার মধ্যে আমরা ভালো ব্যবস্থাপনা করছি।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলেও সে প্রমাণ পাওয়া যাবে। কেউ যদি ভালো সময়ের সঙ্গে এই সময় মেলানোর চেষ্টা করেন, তাহলে মেলানো যাবে না। এটা যদি একই রকম না হয়, তাহলে কার সঙ্গে কার তুলনা করবেন?’

আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।

প্রথম আলোর আয়োজনে গত ২১ মে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও বাজেট প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে চলছে প্রশাসননির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। অর্থ ও মুদ্রানীতি-সম্পর্কিত সরকারের কঠোর আইন আছে। সেখানে যেসব কাজ করার কথা বলা আছে, সেগুলোও সরকার করছে না। ফলে যেটা হচ্ছে, সমস্যা তৈরি হওয়ার পর নীতি-ব্যবস্থাগুলো সরকারের দিক থেকে প্রতিক্রিয়ার মতো আসে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এখন ‘অটো পাইলটে’ চলছে। এই অটো পাইলট স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে। এটা তো হতে পারে না।

দেবপ্রিয় সেদিন আরও বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের প্রতি অবজ্ঞা এবং অনেক ক্ষেত্রে অন্ধত্ব আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা যে উন্নয়ন-উপাখ্যান তৈরি করেছি, সেই উন্নয়ন-উপাখ্যানের সঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তখন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণকেও বিভিন্ন ধরনের অপমানসূচক বক্তব্য দিয়ে ছোট করা হয়। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার এখন মেনে নিচ্ছে, অর্থনীতিতে সংকট বিরাজমান। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, সংকট বিরাজমান, এখন বিকাশমান।’

দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ‘অনন্য দেবতার’ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যা সমাধানে মধ্য মেয়াদের চেয়ে স্বল্প মেয়াদে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হতে হবে দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি।

আজ ক্রয় কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যখনই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি, তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। তবে এই কোভিড আর ইউক্রেনের যুদ্ধ অনেক সুযোগ সৃষ্টি করবে। সেগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনীতিবিদ এর বাইরে চিন্তা করতে পারেন না। এর বাইরে চিন্তা করার কিছু নেই।’

যুদ্ধের কারণে সবাই চাপের মধ্যে আছে, এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আর যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধ এখনই থামুক। এটাই আমাদের চাওয়া। এটা ঠিক যে আমাদের বাহ্যিক যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সে সম্পর্কে অনুমান করা যায় না। যুদ্ধের কারণে সেটি করতে পারব না। এতটুকু চাপ তো অবশ্যই থাকবে, সবাইকে কিন্তু এটি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কী করবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মেহেরবানি করে অপেক্ষা করুন। পাকিস্তান কী করল, তা আমাদের জানার বিষয় না। আমাদের ও তাদের চাহিদা এক না। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে যদি আমরা সরাসরি পণ্য আমদানি করতে পারি, সেটাই হবে আমাদের জন্য লাভ।’

সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং আমলাতান্ত্রিক বিষয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, গত সপ্তাহেই এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।